সত্য ঘটনা- গাড়ীতে উঠলেই রোকেয়া বমি করে। স্বামীর সাথে প্রাইভেট কারে উঠা ও চলাচল করা খুব সমস্যা । চা বাগানের ম্যানেজার হিসেবে স্বামীর সাথে প্রতিনিয়ত প্রাইভেট কারে যাতায়াত করতে হয়। এই অবস্থায় ২০০৪ সালে ইএমডিআর সাইকোথেরাপিস্টের সাথে দেখা হলো। উনি মাত্র ১ টা সেসন দেয়্ । আজ প্রায় ১৯ বছর হলো তার আর কোন প্রকার বমির সমস্যা হয় নাই।
কারনঃ
গাড়ীতে বমি করাকে অনেকে মোশন সিকনেস বলে। কিন্তু এর কারন কি? কেন গাড়িতে উঠলে বমি হয়?
গতি ও জড়তার ফলে মস্তিষ্কে সমন্বয়হীনতার বাহনগুলোতে বমির সমস্যা হতে পারে –বলে অনেকে মনে করে। অন্তঃকর্ণ আমাদের শরীরের গতি ও জড়তার ভারসাম্য রক্ষা করে। যখন গাড়িতে চড়ি তখন অন্তঃকর্ণ মস্তিষ্কে খবর পাঠায় যে সে গতিশীল। কিন্তু চোখ বলে ভিন্ন কথা। কারণ তার সামনের বা পাশের মানুষগুলো কিংবা গাড়ির সিটগুলো থাকে স্থির। চোখ আর অন্তঃকর্ণের এই সমন্বয়হীনতার ফলে তৈরি হয় মোশন সিকনেস।
আবার অনেকে কারন হিসেবে এসিডিটিকে (গ্যাস্ট্রিক) দায়ি করে ।
কিন্তু বিষয়টি তা নয়। বিষয়টি মনো-দৈহিক।
চিকিৎসাঃ
গাড়িতে বমি করা থেকে মুক্তির জন্য অনেকে অনেক ধরনের কথা বলেছে। যেমন-
- বাইরের বাতাস ভেতরে আসতে দিন বা জানালার কাছে বসুন।
- চলন্ত অবস্থায় প্রকৃতি দেখুন।
- যেদিকে গাড়ি চলছে, সেদিকে পেছন করে বসবেন না।
- গাড়িতে সামনের দিকে বসার চেষ্টা করুন।
- জানালাটা খুলে দিন। ঠান্ডা বাতাস লাগবে শরীরে।
- যাত্রার আগের দিন রাতে ভালোভাবে ঘুমিয়ে নেবেন।
- চলন্ত অবস্থায় একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব নিয়ে আসুন।
- চলন্ত গাড়িতে বই ও ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। বই, পত্রিকা ইত্যাদি পড়তে থাকলে বমি বমি ভাব বা বমি হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
- গাড়িতে ওঠার আগে মুখে ছোট এক টুকরো আদা পুরে নিন যা খাদ্য হজমে সহায়তা করবে।
- যাত্রা শুরুর আগে ভরপেট খাবেন না বা পানি পান করবেন না।
- বমি বা বমি বমিভাব বন্ধ করার মেডিসিন চিকিৎসকের পরামর্শমতো সেবন করতে পারেন।
- বমি হলে দারুচিনি খেতে পারেন।
- বমি বমি ভাব লাগলে এক টুকরো লবঙ্গ মুখে পুরে রাখুন।
- টকজাতীয় ফল বেশি করে খেলে বমির ভাব দূর হয়ে যায়।
- লেবুপাতার গন্ধ বমির ভাব দূর করে।
- এসিডিটির সমস্যা থাকলে পুদিনা পাতা খেতে পারেন।
- চুইংগাম খেলে মুখ ও মন ব্যস্ত থাকে।
- কোন খেলা বা কোন চিন্তা নিয়ে ব্যাস্ত থাকা যেতে পারে।
- ‘গাড়িতে উঠলেই আমার বমি হবে’—এমন চিন্তা মনে আনবেন না।
বাস্তবে তাই কি আর এসব উপদেশ দিয়ে কিছু হয়?! বমি আসবেই। কেউ থামাতে পারবে না। প্রচন্ড গতিতে আসবে এবং যা ঘটনা তা ঘটাবেই।
অতএব উপরের যে সব উপদেশগুলো দেয়া হয়েছে বমি সমস্যা সমাধানের জন্য যা মূলত: কোন কাজে আসে না বলেই অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। কারন বমি একটি মানসিক বা মনো-দৈহিক সমস্যা। এর জন্য প্রয়োজন মনের চিকিৎসা বা সাইকোথোরাপি। ইএমডিআর সাইকোথেরাপিতে মাত্র ২/৩ টি সেসনেই ভুক্তভোগীর মনের এই রোগ দুর হয়ে যায়।
ইএমডিআর হলো পৃথিবীর সবচাইতে আধুনিক ও দ্রুত চিকিৎসা পদ্ধতি যা মনের গভীরে জমে থাকা বা লুকিয়ে থাকা ঘটনাকে বেড় করে দেয় ও তা থেকে যে সমস্যা তৈরী হয় তা সারিয়ে তোলে।
কাজী মাহমুদুর রহমান, সাইকোথেরাপিস্ট
সাইকোথেরাপি সার্ভিসেস।
০১৯১৪০০৯৯৪৭ (হোয়াটস আপ)