গত ২০শে ফেব্রয়ারী, ২০২২ তারিখে প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদের জন্য বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বীমা প্রকল্প চালু হয়। এটা একটা মহতী পদক্ষেপ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। এই বীমা প্রকল্পের ১২ নং ধারা, বীমার টাকা পরিশোধের প্রক্রিয়া, নিয়ে আমার ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ ও সমালোচনা করছি প্রতিবন্ধীদের বৃহত্তর সাথ রক্ষা করার জন্যে।
বীমা প্রকল্পের ১২ নং ধারায় বলা হয়েছে যে, বীমা দাবী নিষ্পত্তির জন্য নির্ধারিত আবেদন ফর্মে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সাধারন বীমা কর্পোরেশন বরাবর বীমা দাবী আবেদন দাখিল করতে হবে। এর ফলে যে ধরনে পরিস্থিতি তৈরী হবে তা হলোঃ-
১) বীমাকৃত ব্যাক্তি হাসপাতালের সকল দেনা পাওনা পরিশোধ করার পর বীমা কোম্পানির কাছে দাবী নিষ্পত্তির জন্য আবেদন করবে। এতে প্রতিবন্ধী ব্যাক্তির হাতে যথেষ্ঠ অর্থ থাকার ব্যাপার রয়েছে। অভিভাবকরা প্রতিনিয়ত এই বিশেষ ব্যাক্তিদের জন্য অর্থ ব্যায় করে তাদের হাতে কতইবা অর্থ থাকবে যে হাসপাতালের ব্যায় প্রথমে পরিশোধ করবে। এই বীমা প্রকল্প করা হয়েছে প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদের আর্থিক সহায়তা করার জন্য । নিজ থেকে ব্যায় করার পর বীমা দাবী নিষ্পত্তির জন্য বীমা কোম্পানির দ্বারে দ্বারে ঘুরবে।
২) প্রতিবন্ধী ব্যাক্তি বীমা কোম্পানির দ্বারে দ্বারে ঘুরতে যে পরিমান যাতায়াত খরচ হবে তা বহন করা প্রতিবন্ধী ব্যাক্তি বা পরিবারের জন্য চাপ মূলক হবে।
৩) বাংলাদেশের যে চিত্র তাতে নিজ থেকে টাকা ব্যায় করে তা বীমা কোম্পানির কাছ থেকে আদায় করা একটা মহা যন্ত্রনাময় কাজ। এই যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে সুস্থ ব্যাক্তি অসুস্থ হয়। সেখানে প্রতিব্ন্ধী ব্যাক্তি যে আরো প্রতিবন্ধী হবে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে?
৪) বীমা দাবী পরিশোধের জন্য বীমা কোম্পানিগুলো যে পরিমান প্রক্রিয়াগত কালক্ষেপন করে তার ক্ষতিকর প্রভাব প্রতিবন্ধী ব্যাক্তির উপর পরবে নিশ্চিত।
৫) পুরাভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় নানা ধরনের অযুহাতে বীমা কোম্পানীগুলো বীমা দাবীর আংশিক পরিশোধ করে । বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে বীমা প্রক্রিয়ায় নানা বিবিধ নিয়ম কানুন কারো পক্ষে জানা বা মানা সম্ভব নয়। বীমা কোম্পানিগুলো এসবের সুযোগ নিয়ে সাধারন জনগনকে বীমা দাবী পরিশোধে প্রতারণা করার অভিযোগ বা অক্ষেপ অনেকের কাছ থেকে শোনা যায়। আইনে কোথাও বলা হয়নি যে,, ত্রুটি বিচ্যুতি যাহাই থাকুক না কেন, চিকিৎসা নেয়ায় সাপেক্ষে দাবীকৃত বীমা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
আধুনিক চিকিৎসা বীমা ব্যবস্থাপনায়, বীমাকৃত ব্যাক্তি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেয়ার সময় বীমা কোম্পানিকে ফোন বা ইমেইল করে জানিয়ে দেয়। পাশাপাশি চিকিৎসা কেন্দ্রও বীমা কোম্পানি বীমাকৃত ব্যাক্তির বীমা নম্বর ও অন্যান্য তথ্য দিয়ে বীমা কোম্পানিকে অবহিত করে। এরপর নির্ধারিত কাগজে সাইন করে বীমাকৃত ব্যাক্তি হাসপাতাল পরিত্যাগ করে। বীমা কোম্পানি সরাসরি সেবা প্রদানকারী হাসপাতালকে চিকিৎসা ব্যায়ভার প্রদান করে।
অতএব এই ব্যাপারে সন্মনিত ব্যাবস্থাপনা পরিচালক, নিউরো –ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট, সমাজ কল্যাণ সহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে নিবেদন, এই যে বীমা দাবী নিষ্পত্তি ধারা অতিদ্রুত সংশোধন করা হোক আধুনিক বীমা ব্যাবস্থাপনা মতে । বীমা নি্ষ্পত্তি ধাপে প্রতিবন্ধী ব্যাক্তি ও তার পরিবারকে জড়িত না করা ও চিকিৎসা নেয়া সহজতর করা।
[ বিঃদ্রঃ আলোচনাতে প্রতিবন্ধী শব্দটি ব্যাবহার করা হয়েছে সুধু মাত্র বীমা প্রকল্পে ব্যাবহৃত শব্দের সাথে সঙ্গতী সাধনের জন্য]
লেখক শিশুদের বিশেষ শিক্ষক ও প্রশিক্ষক, সাইকোথেরাপিস্ট, বিহ্যাভিয়ার থেরাপিস্ট
ফোন নং- ০১৯১৪০০৯৯৪৭