আশ্চর্য্য হলেও সত্যি যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্ম ১৭ই র্মাচ ১৯২০ সাল এবং একই বছর ২৩শে মার্চ ইংল্যান্ডের র্পালামেন্টে জন্ম হয় ঢাকা ইউনিভার্সিটি এক্ট, ১৯২০ ( Dacca University Act, 1920 ) । এই আইন বলে, ১৯২১ সালের ১লা জুলাইতে সুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাত্রা। এতদিন আমাদের শেখানো হয়েছিল সলিমুল্লাহ সাহেব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরী করেছে, তা মোটেও সঠিক নয়। ব্রিটিশ শোষকরা শোষনের বীজ বোপণের জন্য যে দেশে তৈরী করছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেই দেশেই জন্ম হয় ব্রিটিশ-পাক খেদানো ক্ষুদিরাম প্রজন্ম, শেখ মুজিবর রহমান।
যে বিশ্ববিদ্যালেয়ের মাধ্যমে ব্রিটিশরা ভারতীয় গুরুশিক্ষা পদ্ধতি বা গুরুশিক্ষা নীতিকে গলা টিপে হত্যা করে নির্মল শোষন কায়েম করতে চেয়েছিল। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরী হলো সর্বযুগের সর্বগুরু যাঁর আঙ্গুলের ইশারায় প্রাণ দিতে প্রস্তুত হয়েছিল কোটি কোটি প্রাণ । প্রাণ দিয়েছিল গুরুভক্ত শিষ্যরা এবং ১৯৭১ সালে এই গুরু পুরো জাতিকে দিলেন এক চুড়ান্ত বিজয়ের অর্জন। তাই আজ আমরা স্বাধীন। তাই আজ আমাদের হাতে একটি পতাকা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা বা পতাকা কতটুকু কষ্টার্জিত তা অনুধাবন করার জন্য একটি তথ্য শেয়ার না করলেই নয়। তা হলো, ১৭০০ সালের পর প্রায় পুরো পৃথিবীকে ব্রিটিশ নিজ শাষনের আওতায় আনে । দখলকৃত দেশগুলোর মধ্যে উলেখ্য হলো সাউথ অফ্রিকা, কানাডা, হংকং, ভারতবর্ষ, অষ্ট্রেলিয়া, আমেরিকার অংশ। এর মধ্যে সুধু মাত্র ভারতবর্ষ ব্রিটিশমুক্ত হয় । ভারতবর্ষের ব্রিটিশ মুক্তির পেছনে অনেক ত্যাগ করতে হয়েছে, অনেক রক্ত ঝরাতে হয়েছে। এই ত্যাগে বাঙ্গালীদের অবদান সবচেয়ে বেশি ছিল। ব্রিটিশ খেদানোতে সবচেয়ে বেশি জীবন দেয় বাঙ্গালীরা [সম্মক জ্ঞান লাভের জন্য ইতিহাস জানতে হবে বিশেষ করে আন্দামান সেলুলার জেলের কাহীনি না জানলে সব পরিস্কার হবে না]। উল্লেখ্য পাঞ্জাবের ভগত সিং সহ বেশ কিছু নেতার আত্বদানের ইতিহাস আমরা অনেকে জানি। তবে পরিসংখানগত দিক থেকে ব্রিটিশ খেদানোতে বাঙ্গালীরাই সবচেয়ে বেশি প্রাণ দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কিছুটা সুবিধা হয়েছিল নেতাজি সুবাস বোসের কারনে। পুরো অখন্ড ভারতের স্বপ্ন যিনি দেখতেন। রবীন্দ্রনাথ ছিল যার গুরু। সেই নেতাজির অখন্ড ভারত ব্রিটিশ মুক্ত হলেও স্বাধীন হলো না, হলো খন্ড খন্ড বন্টন। ব্রিটিশরা নেহেরু -জিন্হাকে বন্টন করে দিল পুরো ভারতকে। বিভক্ত করলো বৃহত জাতিগুলোকে। কাশ্মির, পাঞ্জাব, বাংলা খান খান হলো এই দুই ব্রিটিশ পোষ্য নায়কের কারনে। ১৪ ও ১৫ আগস্ট পাকিস্থান বা ভারতের স্বাধীনতা দিবস পালন করলেও তা ভারতীয় জাতি ভাঙ্গা দিবস বা বাটোয়ারা দিবস বলেই অনেক ইতিহাস বিষয়ক গবেষকরা মন্তব্য করেছেন। সেদিক থেকে বাঙ্গালাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রসূত স্বাধীনতা হলো প্রকৃত স্বাধীনতা। আর এই স্বাধীনতার পেছনের নায়ক হলো শেখ মুজিবর রহমান। যিনি তার পুরো স্বপ্ন সাজিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বাংলা অঞ্চলের সকল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র করে।
ইংরেজরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরী করে তাদের নিজ স্বার্থে। দক্ষিন ভারতীয়দের চিরকাল পরাধীন রাখার জন্যই এই প্রতিষ্ঠানের জন্ম। কিন্তু সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠেই পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙ্গার চেষ্টা করা হয়েছে বার বার। ১৯৫২ সালে জনসংখ্যার দিক থেকে বাঙ্গালীরা ছিল পুরো পাকিস্থানের সংখ্যাগরিষ্ঠ (৫৬.৪০%) জনতা । সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্বেও ষড়যন্ত্র করে জিন্নাহরা সংবিধানে রাস্ট্রভাষা উর্দুকে (৩.৩৭%) অবস্থান দেয়ার পায়তারা করে । সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা আন্দোলন করতে হয়েছিল, ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হয়েছিল, বাঙ্গালীকে প্রান দিতে হয়েছিল। এ সবের পেছনে নেতৃত্ব দেন, ১৯২০ সালে জন্ম গ্রহন করা ছাত্র শেখ মুজিবর রহমান।
উনিশ শতকের শেষভাগে বাঙ্গালী সহ ভারতীয়দের আন্দোলনে ইংরেজরা সম্মুখ শোষন থেকে সরে প্রচ্ছন্ন শোষক হওয়ার বৃহত পরিকল্পনা করে। দুটো প্রভিনসিয়াল সরকার গঠন করে শাষন ও শোষন চালানোর প্রস্ততি শুরু করে উনিশ শতকের শেষদিকেই । সেই প্রাদেশিক (প্রভিন্সনাল) ছকে পদ্মা নদীর এপার ওপার বাঙ্গলা দুই ভাগে ভাগ করার আইন পাশ হয় । ফলে ভৌগলীকভাবে বাংলা দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। বাংলার সেই দুই ভাগকে রুখতে ১৯০৫ সালে জন্ম হয় বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন । আন্দোলনের পুরোধা রবীন্দ্রনাথ গেয়ে উঠেন ‘ আমার সোনার বাংলা.. .. .. । ঐ সময়গুলোতে ইংরেজরা প্রদেশ চালানোর জন্য নেহেরু জিন্নাহদের বিলেতে নিয়ে গিয়ে ব্যারিস্টার ডিগ্রী দেয়, যে ডিগ্রীতে পড়াশোনা নাই আছে ব্রিটিশ বশ্যতা ও অনুগত ভৃত্য হওয়ার মেকানিজম [শরত ও রবীন্দ্র রচনা পড়লে পরিষ্কার হবে] । অথচ আমার সোনার বাংলার রুপকার রবীন্দ্রনাথ রানীর দেয়া নাইটহুড সম্মাননা প্রত্যাখান করেন। যাইহোক, পরবর্তীতে (১৯৪৭) অনেকটা সেই প্রভিন্স সরকার আদলে দুটো রাস্ট্রে ভারতবর্ষকে বন্টন করে নেহেরু জিন্নাহর কাছে ক্ষমতা হাতবদল করে ইংরেজরা পালায়। এই পালানো নির্ভিঘ্নে নিশ্চিত করার জন্য রায়টের মতো ঘৃত বিষয়টিও ঘটায় বলে ইতিহাসবিদরা দাবি করেন।
অনেকে মনে করেন, প্রশাসনিক পর্যায়ে প্রাদেশীক সরকারের (প্রভিন্স গর্ভমেন্ট) প্রয়োজনীয় কর্মচারী তৈরীর জন্যেই মুলত: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের জন্ম হয়েছিল ব্রিটিশের পালামেন্টে। সোজা কথা ভারতীয় প্রদেশ শোষনের কল্পে ভারতীয়দের মধ্যে থেকে ইংরেজ পোষ্য চাকুরে (আমলা শ্রেণী) তৈরীর জন্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম। বলতেই হচ্ছে যে, ইংরেজ – ব্রিটিশ শোষকরা সফল হয়েছিল এই বিশ্ববিদ্যালয় তৈরী করে। তাই আজো ঐতিহ্য বজায় রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ছাত্র ও শিক্ষক চাকুরী খোঁজে। শিক্ষার্থীরা চাকুরী করার জন্যই মূলত: লেখা পড়া করে। অর্থাৎ তারা চাকর হতে চায়। শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতাকে বলে শিক্ষকতা চাকরী । গবেষণা হয় চৌর্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে (বাংলা নিউজ ২৪- ২২.০৩.২০২১) । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভুরি ভুরি ডক্টর ডিগ্রীধারী আছে কিন্তু জ্ঞান নেই (বণিক বার্তা ১৬.০৩.২০২১)। শিক্ষকতা কখনও চাকরী নয়। তাদের আচরণ চাকরীজিবীদির মত (৯টা- ৫টা)। যাইহোক, ব্রিটিশ শোষন শেষ হওয়ার পর শুরু হয় পাকিস্থান শোষন। পাকিস্থানও বাঙলাদেশকে প্রদেশ বা প্রদেশীয় দাস বানানোর পায়তারা করে। ব্রিটিশ সরকারের প্রাদেশিক শাসনকে ভাঙ্গার অবস্থানে যেতে না পারলেও পাকিস্থান শোষকদের প্রাদেশিক মনোবল শেখ মুজিব ১৯৬৬ এর ৬ দফা অন্দোলনের মাধ্যমে ভাঙতে শুরু করেন। ৬ দফা জনগনের ন্যায্য দাবির চেতনায় নাড়া দেয়। এই ৬ দফায় জনগন বুঝতে শিখে তারা কিভাবে প্রতারিত হচ্ছে। শেখ মুজিব পাক শোষক থেকে জনগনকে ভাবতে শিখিয়েছে স্বাধীন প্রাদেশিক ব্যবস্থা কেমন করে হয় [এই কথাটি বুঝতে হলে পাঠককে ৬ দফা পড়তে হবে] । ৬ দফা বাস্তবায়ন কি করে সম্ভব তার স্বপ্নও শেখ মুজিব দেখান। সর্বস্তরের জনগন নিজেকে মনে মনে প্রস্তত করে স্বাধীন প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র হিসেবে। ঘোষনা না দিলেও শেখ মুজিবরের নানা ভাষনে জনগন নিজ নিজ অবস্থান থেকে ছায়া স্বাধীন প্রাদেশিক সরকার গঠন করে, যা ছিল মানসিক সরকার। পরবর্তিতে ৬ দফা পরিনত হয় ১ দফায়। সেই ১ দফা ছিল হাজার বছরের বাংলার স্বপ্ন। স্বাধীনতা।
শেখ মুজিব ১৯৭০ র্নিবাচনে বিজয় লাভের পর সকলের কাছে এটা পরিস্কার হয় যে, বাঙ্গালী স্বাধীন প্রাদেশিক সরকার নয় পুর্ণ (অল) পাকিস্থানের সরকার গঠন করবে এবং রাজধানী ঢাকাতে নিয়ে আসবে। প্রসাশন ও সামরিকবাহীনিতে বাঙ্গালীর আধিপত্য বাড়বে বা বাঙ্গালী দ্বারা পরিচালিত হবে। তাইতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা স্বপ্ন দেখে নিজেকে অল পাকিস্থানের সরকারী কর্মচারী হিসেবে। তাইতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ চলে আসে শেখ মুজিবের শিষ্যের কাতারে। বাঙ্গালী সামরিক বাহীনির অফিসাররা স্বপ্ন দেখে সামরিক বাহীনির প্রধান হওয়ার। সকলে আশা করেছিল শেখ মুজিব অল পাকিস্থান সরকার গঠন করবে এবং বাঙ্গালী সকল পাকিস্থানের আধিপত্য দখলে নেবে। উল্লেখ্য শেখ সাহেবের পার্টির নাম ছিল নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ / অল পাকিস্থান আওয়ামী লীগ (All Pakistan Awami league) । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে শেখ মুজিবরের যোগসুত্র যেন এক অবিচ্ছেদ্য সংগ্রামের ইতিহাস। পৃথিবীর কোন স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এমনভাবে ঝাপিয়ে পড়ার নজীর নাই। অথচ ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের ছাত্ররা ঝাপিয়ে পড়েছিল এবং সফল হয়েছিল। এই সবই ঘটেছিল শেখ মুজিবের মহা পরিকল্পনা মাফিক, মহা প্রশিক্ষনের মাধ্যমে।
৭০ সংসদ নির্বাচনে জয় লাভের পরও যখন শেখ মুজিবরের অল পাকিস্থান আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া তালবাহানা করছিল, পশ্চিম পাকিস্থান থেকে পুরাতন অস্র ঠিকঠাক করা সহ নতুন অস্র ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে জড়ো করা হচ্ছিল, তখন বাংলাদেশের জনগনের বুঝতে বাকি রইলো না ঢাকাতে কি ঘটতে চলেছে। আরো পরিস্কার হলো যখন বেলুচ রেজিমেন্ট সমুদ্র পথে পূর্ব পাকিস্থানের (বাংলাদেশ) উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার খবর পাওয়া গেল। নির্বাচনে জয় লাভ করা শেখ মুজিবরের সংসদ গঠন সপথ জানিত জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের তারিখ নিরধারন করা হয় ১লা মার্চ । অথচ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ১লা মার্চে টিক্কা খানকে পাঠালো বাংলা আঞ্চলিক (পূর্ব পাকিস্থানের) প্রধান করে (টিক্বা খানের মানুষ হত্যার কু-খ্যাতি সকলের জানা ছিল) এবং জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করা হলো। তখন কারো মনে আর সন্দেহের অবকাশ থাকলো না যে কি ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাদেশের বাঙ্গালীদের সাথে। উল্লেখ্য ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন। সে বঙ্গবন্ধুর সাথে দুই দফা আলোচনা করেন। এই আলোচনা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু জানান:“ ‘আলোচনা সন্তোষজনক হয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট খুব শিগগিরই ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বানে সম্মত হয়েছেন।’ ” একইভাবে পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সাংবাদিকদের বলেন,“ ‘দেশের ভাবী প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব তার সঙ্গে আলোচনা সম্পর্কে যেসব কথা বলেছেন, তা পুরোপুরি সঠিক।’ অথচ গোপনে সামরিক সজ্জা বাড়ানো ও জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বন্ধ যা কিনা ষঠতা ও বিপদজনক ছিল।
এমন পরিস্থিতিতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায়, ২রা মার্চে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে দিলেন। গাওয়া হলো কিংবদন্তী সঙ্গীত আমার সোনার বাংলা…..। সেই পতাকা পল্টনের মাঠে উঠানো হলো । প্রত্যেক বারেই স্লোগান দেয়া হলো ..জয় বাংলা.. জয় বাংলা.. .. ..। পরবির্ততে সেই পতাকা শেখ মুজিবের হাতে হস্তান্তর করা হয়, নেতৃত্বের চরম নির্দেশনা স্বরুপ। একটি রাস্ট্রের মাঝে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন অসম সাহসিকতার পরিচয়। এটা ছিল দেশ-বিদেশ সকল গয়েন্দা ও রাষ্ট্রদুতদের জন্য একটি বার্তা। এই শাক্তিশালী বার্তা প্রদানের জন্য ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে খেশারত দিতে হয়েছে। পাক-সামরিক জান্তারা (টিক্কাখান) যে অপারেশন সার্চ লাইট শুরু করেছিল তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে টার্গেট করে।
জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর ১৯৭১ পতাকা ৭ই মার্চ শেখ মুজিব পরিস্কার করে দিলেন বাঙ্গালীকে কি করতে হবে। সেই ৭ই মার্চের ভাষনের স্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্ত্বর । টিক্কাখানকে কিভাবে সামাল দিতে হবে, হারাতে হবে। আগরতলা থেকে গোপনে আনা অস্রগুলো কিভাবে ব্যবহার করতে হবে তাও তিনি একই ভাষনে বলে দিলেন। এই ভাষনেই শেখ মুজিব বিশ্বের দরবারেও স্বাধীনতার খবর পৌছে দেন। কমান্ডোরা শত্রুর তৈরী অস্রকে যেমন শত্রুর বিরুদ্ধে অস্র হিসেবে ব্যবহার করে জয় লাভ করে । শেখ মুজিব ব্রিটিশের দেয়া যন্ত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবহার করে মহান মুক্তিযুদ্ধে ও স্বাধীনতা অর্জন করেন।
ব্রিটিশরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে তৈরী করেছিল একটি মুখস্থ নির্ভর শিক্ষা পদ্ধতি যা আমাদের প্রাচীন গুরুশিক্ষা পদ্ধতির প্রতিস্থাপক। মুখস্থ নির্ভর প্রতিষ্ঠান হলো চৌর্বৃত্তির সম। একটি উক্তি না বলিলেই নয়। “মুখস্থ করিয়া পাস করাই তো চৌর্যবৃত্তি! যে ছেলে পরীক্ষাশালায় গোপনে বই লইয়া যায় তাকে খেদাইয়া দেওয়া হয়; আর যে ছেলে তার চেয়েও লুকাইয়া লয়, অর্থাৎ চাদরের মধ্যে না লইয়া মগজের মধ্যে লইয়া যায়, সেই-বা কম কী করিল? -রবীন্দ্রনাথ (শিক্ষা। শিক্ষার বাহন)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখস্থ নির্ভর শিক্ষা পদ্ধাতি চৌর্যবৃত্তির সম। উল্লেখ না করলেই নয়, যুদ্ধের পরে বিদেশ থেকে প্রতি বাঙালির ১ টা কম্বল এই হিসেবে ত্রাণ সামগ্রী আসে । কম্বল বিতরনের সময় দেখা গেল বঙ্গবন্ধুর ভাগেরটা নেই, তখন তিনি তার সহকর্মীদের বললেন,— সবাই পেলো সোনার খনি আর আমি পেলাম চোরের খনি ……। ১৯৭২ -৭৫ পর্যন্ত শেখ মুজিব বিভিন্ন ভাসণে তার সহকর্মীদের চোর বলতে দ্বীধা করেন নাই। বিশেষ করে বাণিজ্য মন্ত্রি খন্দকার মোশতাককে লক্ষ্য করে এমন ভৎসনা করতেন। এই মোশতাক ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ছাত্র। মোশতাক সহ নানা প্রকার চোরদের ঢাকা বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয় প্রস্রয় দিয়ে থাকে। আজ যত আমলা দেখছেন যাদের কারনে দুর্নীতিতে বাংলাদেশ চাম্পিয়ান হচ্ছে বার বার তারা এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেরে আদলে তৈরী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কল্যানে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যতই চোরের খনি হোক না কেন স্বাধীনতার সংগ্রামে এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের অবদান ইতিহাসের পাতায় স্বর্নাক্ষরে লিখা থাকবে । ক্ষুদিরাম-স্বাধীনতা-শেখ মুজিব-ঢাকা বিশ্ববিদালয় ১৯৭১ এর রক্তাক্ত স্বাধীনতার ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ক্ষুদিরামের ফাঁসি হয় ১১ আগস্ট, ১৯০৮ এবং এর পর পীতাম্বর সেন গান লেখেন -.. একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি… .. দশ মাস দশদিন পরে
জন্ম নেব মাসির ঘরে মাগো….. .. .. । ক্ষুদিরামের ফাঁসির ১২ বছর পর অর্থাৎ ১৯২০ সালে জন্ম হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং শেখ মুজিবর রহমানের। এর একটি সমীকরণ করা যেতে পারে এমনভবে যে কোন সংগ্রামের জন্য ত্যাগী নেতার পাশাপাশি ত্যাগী কর্মীর প্রয়োজন আছে। এই দুটোর সমন্নয়েই যে কোন জয় পাওয়া যায়। বাঙ্গালীর হাজার বছরের স্বপ্ন স্বাধীনতা সেই কারনে পেয়েছিল যেখানে নেতা ছিল শেখ মুজিব ও কর্মীরা ছিল ঢা: বি: ছাত্র সমাজ। আরেকটি পর্যবেক্ষন এখানে না উল্লেখ্য করলে আলোচনা অসম্পুর্ণ থেকে যাবে হয়তো, তা হলো বঙ্গবন্ধুর হত্যা। ক্ষুদিরামের ফাঁসি হয়েছিল ৭ই আগস্টে যা ছিল আইনি অন্যায় হত্যা। তেমনি সেই আগস্টের ১৫ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে অন্যায় হত্যা করা হয় আইন রক্ষক দ্বারা। পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। দুটো হত্যা হয় শোষকদের ইন্ধনে। জানি না আবার কি সেই ক্ষুদিরাম ফিরে আসবে কিনা । নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ পত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে ক্ষুদিরামদের আগমন একান্ত প্রয়োজন।