দেশের রপ্তানীমুখি পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির জন্য অবিলম্বে মজুরি বোর্ড গঠনের দাবিতে শ্রম মন্ত্রনালয় অভিমুখে বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র। আজ ১ মার্চ ২০২৩, বুধবার, বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শ্রম মন্ত্রনালয় অভিমুখে শ্রমিকদের বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বর্তমান বাজারদরের সাথে সঙ্গতি রেখে পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা ঘোষণা এবং নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়। সমাবেশ থেকে সোয়েটারের পিস রেটসহ সকল গ্রেডে একই হারে মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানান বক্তারা।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে শ্রম মন্ত্রনালয় অভিমুখে শ্রমিকদের বিক্ষোভ মিছিল পল্টন মোড় ঘুরে জিরো পয়েন্ট হয়ে সচিবালয়ের কাছে পৌঁছালে ব্যাপক পুলিশির বাধার মুখে পরে। পরে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান শামীমের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গার্মেন্ট টিইউসির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শ্রমিকনেতা মন্টু ঘোষের সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান শামীম, সহ-সভাপতি জলি তালুকদার, জিয়াউল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা দুলাল সাহা, মঞ্জুর মঈন, আজিজুল ইসলাম, প্যারাডাইস কেবল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ রাসেল প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে শ্রমিকনেতা মন্টু ঘোষ বলেন, পোশাক শিল্পের মালিকরা অর্থনীতির চরম দুর্দিনে ডলারে তাদের মুনাফার অংক গুণছেন কিন্তু শ্রমিক মজুরি পাচ্ছে টাকায় এবং ৫ বছর আগে নির্ধারণ করা হিসাবে। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে সর্বশেষ ঘোষিত নিম্নতম মজুরি সেসময়ের প্রেক্ষাপটে শ্রমিকদের প্রয়োজন, বাজারদর এবং দাবির সাথে সামান্যও সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিলো না। গত কয়েক বছরে জিনিসপত্রের দাম, বাড়ি ভাড়া বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্রমিকদের শুধু নয় বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের অবস্থা চরম বেগতিক। এই অবস্থায় বিদ্যমান মজুরি দিয়ে দেশের ৭৮ ভাগ রপ্তানি আয় করা পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের পক্ষে কোন রকম জীবন ধারণ করাও সম্ভব হচ্ছে না।
সমাবেশে গার্মেন্ট টিইউসির সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান শামীম বলেন, দেশের তৈরী পোষাক শিল্পে শ্রমিকের ভূমিকা এবং অবদানই প্রধান। তিনি বলেন, সরকার দ্রুত মজুরি বোর্ড গঠন করে গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি না করলে শ্রমিকদের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ চলমান নিয়মতান্ত্রিক বিক্ষোভে সীমাবদ্ধ থাকবে না। তিনি আরো বলেন, সরকারের উদাসীনতা অতীতের মতো আরো একটি শ্রমিক বিদ্রোহের জন্মদিলে তার দায় দায়িত্বও সরকারকেই নিতে হবে।
সমাবেশে গার্মেন্ট টিইউসির সহ-সভাপতি জলি তালুকদার বলেন, বর্তমান বাজারে অন্তত ২৫ হাজার টাকার কম মজুরিতে কারো পক্ষে বাঁচা সম্ভব নয়। সরকার নির্বিকার, ভ্রুক্ষেপহীন। শ্রম মন্ত্রনালয় পরিণত হয়েছে মালিক মন্ত্রণালয়ে। তিনি আরো বলেন, এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে শ্রমিকের মজুরি পুনঃনির্ধারণ করা উচিত। শ্রমিকরা কোন দয়া-দাক্ষিণ্য চাচ্ছে না। শ্রমিকরা অধিকারের জন্য লড়াই করছে। তিনি দাবি আদায়ে সরকার ও মালিক পক্ষকে বাধ্য করতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।