বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ হিসেবে দ্বিতীয়বার দায়িত্ব নিচ্ছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহ। রাসেল ডোমিঙ্গ’র পরে কে হচ্ছেন নতুন কোচ এ নিয়ে গত কয়েক দিন ক্রিকেট পাড়ায় গুঞ্জন চলছে। বিসিবির প্রভাবশালী একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ হিসেবে চন্ডিকা হাথুরেসিংহ দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন। এই লঙ্কান আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে আসার কথা।
২০১৪ সালের ১০ জুন দায়িত্ব নিয়ে ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ ছিলেন এই শ্রীলঙ্কান। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে সেখান থেকেই চুক্তির তোয়াক্কা না করে হঠাৎ করেই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। শ্রীলংকা দলের দায়িত্ব নিয়ে হাথুরুসিংহে প্রথম দফায় বাংলাদেশ দলের হেড কোচের পদ ছেড়েছিলেন। এরপর অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস দলের সহকারী কোচ হিসেবে গতমাস পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তবে সেই দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার খবরটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিশ্চিত করেছেন নিউ সাউথ ওয়েলস কর্তৃপক্ষ।
হাথুরুসিংহের প্রথম মেয়াদে স্মরণীয় বেশ কিছু সাফল্যই পেয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট। ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, এর পরপরই পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা তিনটি ওয়ানডে সিরিজ জয়, ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল খেলা—ওয়ানডে দল হিসেবে বাংলাদেশের সমীহযোগ্য শক্তি হয়ে ওঠেছিল সেই সময়েই।
টেস্টে মিরপুরে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পর কলম্বোতে বাংলাদেশের শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়। গত বছরের শুরুতে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউজিল্যান্ড জয়ের আগপর্যন্ত যা টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা তিন সাফল্য হয়ে ছিল।
হাথুরুসিংহ যখন প্রথমবার বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নেয় তখন দল খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। সেই সাথে এটাও সত্যি যে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা দলটাকেই পেয়েছিলেন তিনি। মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহদের তখন সেরা সময়। আবির্ভাব হয়েছে মোস্তাফিজুর রহমানের। তবে সবার সেরাটা বের করে এনে দলটা গড়ে তোলার কৃতিত্ব অবশ্যই তার পাওনা।
বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব পালনকালে কড়া শিক্ষক হিসেবে তার পরিচিত জুটেছিল। প্রথমবার দায়িত্ব নেওয়ার পরেই এক সাক্ষাৎকারে হাথুরুসিংহে বলেছিলেন, সাকিব আল হাসানও তাঁর কাছে অন্যদের মতোই একজন খেলোয়াড়।’ যার মাধ্যমে শুরুতেই সব খেলোয়াড়কে একই চোখে দেখার বার্তা দিয়েছিলেন। কোচের জায়গা থেকে সে রকম মনোভাবের দরকারও ছিল।
তবে সঙ্গে প্রচুর সমালোচনাও ছিল। সাফল্যের জন্য শর্টকাট রাস্তা বেছে নিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ক্ষতিও করেছেন এমন কথা এখনো বলে অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষক। উদাহরণ হিসেরে বলে, ভয়াবহ টার্নিং উইকেট বানিয়ে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় টেস্ট ক্রিকেটে দীর্ঘমেয়াদি কোনো ফল দেয়নি।
সব খেলোয়াড়কে একই চোখে দেখার বার্তা শুরু করা হাথুরুসিংহকে পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে কোনো ক্রিকেটারের প্রতি তাঁর বিশেষ কোনো দুর্বলতা প্রকাশ না পেলেও কাউকে কাউকে যেন একটু অপছন্দই করতেন, এমন অভিযোগ ছিল অনেকের।
হাথুরুসিংহের প্রথম পর্বে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। শ্রীলঙ্কায় শততম টেস্ট থেকে মাহমুদউল্লাহকে বাদ দেওয়া এবং এরপর ওয়ানডে সিরিজ থেকেও তাঁকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা, মুমিনুল হককে শুধু টেস্টে খেলোয়াড় বানিয়ে দেওয়া, এসব সিদ্ধান্ত দলীয় নাকি তার একার সিদ্ধান্ত এসব বিতর্ক ছিল। এছাড়া ২০১৭ সালে টি–টোয়েন্টি মাশরাফির অবসর গ্রহণে কোচের চাপ ছিল এমটা মনে করেন অনেকে।
এছাড়া ক্রিকেটের প্রথাগত সব নিয়মকানুন ভেঙে দেওয়া অভিযোগও আছে। জাতীয় দলের দেখভালের দায়িত্বে থাকা ক্রিকেট পরিচালনা কমিটি নাকি একরকম অকেজোই হয়ে গিয়েছিল তাঁর সময়ে। নির্বাচকদের স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার শুরুও নাকি তখন থেকেই। যেটির জের এখনো নাকি বয়ে চলেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। তবে বিশ্লেষকদের মতে, প্রথম মেয়াদের হাথুরুসিংহে এমন স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠার দোষটা একক তাকে না দিয়ে দায়টা অবশ্যই বিসিবিকেও নিতে হবে। বিসিবিই তো তাঁকে এমন হয়ে ওঠার সুযোগ করে দিয়েছিল। তারা এটাও মনে করেন, দ্বিতীয় মেয়াদে হাথুরুসিংহের রাশ টেনে ধরাটা বিসিবির অন্যতম চ্যালেঞ্জ হবে।
হাথুরুসিংহের নিজেরও অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট যাচ্ছে একটা পালাবদলের মধ্য দিয়ে। পঞ্চপাণ্ডবের মধ্যে মাশরাফি নেই, বাকি চারজনেরও এখন ক্যারিয়ারের গোধূলিবেলা। সবমিলিয়ে কতটুকু পারবেন তিনি এখন দেখার পালা সেটাই।