স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও মানবমুক্তির সংগ্রামে নিবেদিতপ্রাণ শহীদ কমরেড তাজুল ইসলাম এই দিন শহীদ হন। ১৯৮৪ সালের এই দিনে এরশাদ সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের ৫ দফা দাবিতে ১৫ দল, ৭ দল ও ১১টি শ্রমিক ফেডারেশনের ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলনের মুখে সরকারের লেলিয়ে দেয়া গুণ্ডাবাহিনীর হাতে তাজুল শহীদ হন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)-র আদমজী শাখার সম্পাদক এবং ‘আদমজী মজদুর ট্রেড ইউনিয়নে’র নেতা।
উল্লেখ্য, কুমিল্লা জেলার মতলব থানার ইছাখালি গ্রামের এক সাধারণ পরিবারের সন্তান তাজুল শৈশবে মাতৃহারা হয়ে আর্থিক সঙ্কট মোকাবেলার জন্য ঢাকা শহরে গৃহভৃত্য ও আইসক্রিম বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু সেই প্রবল প্রতিকূলতা শিক্ষা গ্রহণের প্রতি তার আগ্রহ কমাতে পারেনি। তিনি পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষায় কুমিল্লায় প্রথম স্থান অধিকার করেন।
১৯৬৮ সালে তাজুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি ছাত্র ইউনিয়নে যোগদান করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন ও বিভিন্ন গণসংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে তাজুল মুক্তিযুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্নাতকোত্তর পর্যায়ের অধ্যায়ন শেষে তাজুল সমাজতন্ত্র ও শোষণমুক্তির লক্ষ্য নিয়ে ’৭৪ সালে শ্রমিক আন্দোলনে যুক্ত হন এবং প্রধান কর্মক্ষেত্র হিসেবে দেশের বৃহত্তর আদমজী পাটকলকে বেছে নেন।
এক পর্যায়ে বেসিক ইউনিয়নের কমিটিতে ২৫ শতাংশ বহিরাগত ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের থাকার আইন বাতিল হলে তাজুল আদমজীতে সাধারণ শ্রমিকের কাজ গ্রহণ করেন। স্ত্রী, দু’সন্তান নিয়ে একদিকে তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কট, প্রতিকূল পরিস্থিতি, ভয়ভীতি; অপরদিকে সচ্ছল জীবনের সুযোগ ও হাতছানি শহীদ তাজুলকে কখোনই তাঁর আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি।
১৯৮৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে ১১টি শ্রমিক সংগঠন (পরবর্তীকালে স্কপ), ১৫ দল ও ৭ দল আহূত ১ মার্চ দেশব্যাপী হরতাল সফল করার লক্ষ্যে আদমজী মিলের শ্রমিকদের নিয়ে মিছিল বের করলে সরকারের সন্ত্রাসী বাহিনী তাজুলের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায়, তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কমরেড তাজুলের সেই বীরোচিত মৃত্যু সে সময়ের গণতান্ত্রিক সংগ্রামে তীব্র গতিবেগ সঞ্চার করে। আজো এদেশের শ্রমিকশ্রেণির মুক্তি সংগ্রামে শহীদ তাজুল ইসলাম অনুপ্রেরণার অফুরন্ত উৎস। বর্তমানে রাজনীতি, শ্রমিক আন্দোলন ও সমাজজীবনে সন্ত্রাস, কালো টাকা ও সুবিধাবাদের যে দূষণ প্রক্রিয়া চলছে তার বিপরীতে শহীদ কমরেড তাজুলের সততা, আদর্শনিষ্ঠ, দেশপ্রেম, সাহসিকতা ও আত্মত্যাগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন।