ক্রেডিট এডমিনিস্ট্রেশন বিভাগ (CA) হলো ব্যাংক বা ফিন্যান্সিয়ালি ইনিস্টিউটের অন্যতম প্রধান বিতরন বিভাগ যা ঋণের ডকুমেন্টেশনগত ঝুঁকি কমানো, সঠিক ও সময়মত ঋণ বিতরণ, ঋণ পর্যবেক্ষণ ও যথাসময়ে রেগুলেটরি রিপোটিং-এর দায়িত্ব পালন করে। সিআইবির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে ঋণ অনুমোদন বিভাগকে সহায়তার দায়িত্ব পালন করাও এই বিভাগের কর্ম পরিধির মধ্যে পড়ে। বাংলাদেশে ব্যাংক ক্রেডিট রিস্ক গাইডলাইনে ক্রেডিট এডমিন ফাংশন সমন্ধে বলে- The Credit Administration function is critical in ensuring that proper documentation and approvals are in place prior to the disbursement of financial facilities.
ক্রেডিট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের মূল উদ্দেশ্যগুলি হলো, জামানত জরিপ করা; ডকুমেন্টেশনের সম্পূর্ণতা নিশ্চিত করা; জামানত হিসাবে প্রতিশ্রুত সম্পদের মূল্য কভারেজ পিড়িওডিক পর্যবেক্ষণ করা; সমস্ত শর্তাবলী নিশ্চিত করা; বাংলাদেশ ব্যাংক সিআইবি সার্ভারে ঋনের তথ্য জমা দেওয়া; বাংলাদেশ ব্যাংক সিআইবি সার্ভার থেকে ঋণগ্রহীতার ক্রেডিট তথ্য আহরন ও এনালাইসিস করা; ঋণ সংক্রান্ত সঠিক ট্রান্জেকশন নিশ্চিত করা; বাংলাদেশ ব্যাংকে চাহিদা মাফিক ঋণের তথ্য নির্ধারিত তারিখের মধ্যে জমা নিশ্চিত করা প্রভৃতি ।
ক্রেডিট এডমিন -এর কর্ম পরিধি
উপরোক্ত উদ্দেশ্য অনুযায়ী ক্রেডিট এডমিনের কর্মপরিধি তৈরী করা হয়। ক্রেডিট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ফাংশন সেমি-টেকনিক্যাল যা ঋণ অনুমোদন ও বিতরণের আগেই নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে । নথিপত্রগুলো এমনভাবে যাচাই বাছাই করতে হয় যেন ভবিষ্যতে ব্যাংক বন্ধক রাখা সম্পদ দ্রুত বিক্রি করে দেনাদারের দায় পরিশোধ করতে পারে ও মামলাতে জিততে পারে । অনেক সময় ঋণ বিক্রিতে নিয়োজিত রিলেশনশিপ অফিসার হয়তো এমন ভুল করে যার জন্য ব্যাংকের ঋণ আদায় করতে অনেক খরচ হয়ে যায় । বা কখনই ঋণটি আদায় হয় না। এ ধরনের ঘটনা থেকে রক্ষা করাই হলো ক্রেডিট এডমিনের প্রধান কাজ। এছাড়া বাংলাদেশের জমি-জমা সংক্রান্ত রেকর্ড পত্র জটিলতার কারনে অসাধু ঋণ গ্রহীতা চক্রের হাত থেকে প্রতিষ্ঠানকে নিরাপদে রাখাও ক্রেডিট এডমিনের প্রধান কাজ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিস্ক ও কম্প্লাইন্স গাইড লাইন অনুযায়ী ক্রেডিট এডমিন বিভাগের মোটা দাগে যে সকল কাজ রয়েছে তা হলো, ডকুমেন্টেশন পার্ফেকশন, লিমিট লোডিং, ডিসবার্সমেন্ট-ট্রানজেকশন, ডকুমেন্ট সংরক্ষণ, ভ্যালুয়েশন, সিকিউরিটি ডকুমেন্ট যাচাই, সিকিউরিটি সম্পদ যাচাই ব্যবস্থাপনা, স্টক পরিদর্শন, ক্রেডিট মনিটরিং, সুদের ফি আদায়, সেন্ট্রালাইজড ক্রেডিট অডিট কমপ্লায়েন্স, রেগুলেটরি রিপোর্টিং, ঋণ শ্রেণিবিন্যাসকরন, আইএসএস ডেস্ক দাযিত্ব পালন, সিআইইবি তথ্য প্রেরণ ও এক্সট্রাক্ট করন প্রভৃতি।
ডকুমেন্টেশন – সকল প্রকার ঋণের (কর্পোরেট, এসএমই, রিটেইল) ডকুমেন্টেশন নিশ্চিত করা হয় যাতে ভবিষ্যতে কোর্টে পাকা পোক্ত এভিডেন্স হিসেবে কাজ করে । এই কার্যক্রম শুরু হতে পারে ঋণ অনুমোদনের অনেক আগ থেকে। ঋণ অনুমোদনের আগে ঋণের জামানতের সঠিকতা যাচাই বাছাই করার ক্ষেত্রে ক্রেডিট এডমিনের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। তারা যে কোন ফাইলের ডিটেইল দেখে ঋণ বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়।
সিকিউরিটি সম্পদ পরিদর্শন – কখনও কখনও ঋণের বিপরীতে রক্ষিত স্থায়ী বা অস্থায়ী জামানত সম্পদ পরিদর্শন করার প্রয়োজন হয়। এই পরির্দশন কর্মে ক্রেডিট এডমিনের ভুমিকা ব্যাপক। বিশেষ করে ল্যান্ড বিল্ডিং ভিজিট করার জন্য ভুমি ও তদসংক্রান্ত আইন ক্রেডিট এডমিনের জানা থাকার কারনে ভিজিট পরিপূর্ণ হয়। যেহেতু ক্রেডিট এডমিনের সদস্যরা ভুমি ও তদসংক্রান্ত আইনে পারদর্শি সেহেতু তাদের দ্বারা ভিজিট করানো যেমন সঠিক হয় তেমনি বিসনেস ইউনিটকে নতুন বিসনেস করার সময়ের সুযোগ করে দেয়া যায়।
লিমিট লোডিং ও ডিসবার্সমেন্ট ট্রানজেকশন – যখন ডকুমেন্টেশন সম্পুর্ণ হয় তার পর পরেই সফ্টওয়ারে ওডি ঋণের জন্য লিমিট প্রদান ও টার্ম লোনের জন্য ডিসবার্সমেন্ট ট্রানজেকশন দেয়া হয়। এই লিমিট লোডিং-এর সময় গ্রাহকের বেশ কতগুলো তথ্য সিস্টেমে সঠিক ভাবে নিবন্ধন করাতে হয়। এতে অটোমেটেড রিপোর্ট জেনারেশন সহায়ক হয়। এখানে মেকার চেকার পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ । একবার ভুল হলে তা সুধরানোর খেসারত খুব কষ্টদায়ক ও ব্যায় বহুল। এই কাজটি ক্রেডিট এডমিন নিস্ঠার সহিত করে।
ডকুমেন্ট সংরক্ষণ – অনেকে মনে করেন যে, যখনই ডিসবার্সমেন্ট হয়ে যায় তখনিই ডকুমেন্টেশন টিমের কাজ প্রায় শেষ। বিষয়টা মোটেও ঠিক নয়। ডিসবার্স পযর্ন্ত মাত্র ৩০% কাজ শেষ হয়। বাকি ৭০% কাজ করতে হয় ডিসবার্সমেন্টের পরে। কাজগুলো হলো- ডকুমেন্ট সংরক্ষন, ই-আরকাইভ করা, অডিট ও আইনগত বিষয়ের জন্য ডকুমেন্ট পার্ফেকশন করা, পিরিওডিক রিভিও করা, রিনিওবেল ডকুমেন্ট কালেক্ট করা, অরিজিনাল ডকুমেন্ট তোলার থাকলে তা তুলে ফাইলে সংরক্ণ করা প্রভৃতি। এছাড়া গ্রাহকের প্রয়োজনে মর্গেজ ডকুমেন্ট বা তার কপি সময়মত সরবরাহ করা। কখনও কখনও মামলা পরিচালনার সময় ডকুমেন্ট প্রয়োজন । এই প্রয়োজনে লিগাল বিভাগকে সহায়তা করা ক্রেডিট এডমিনের অন্যতম প্রধান কাজ।
ক্রেডিট মনিটরিং : ক্রেডিট মনিটিরিং হলো পুরো ব্যাংকের সবচাইতে গুরুত্বপুর্ণ কাজ। ঋণ দেয়া বড় কথা নয় ঋণ আদায় করাই বড় কাজ। ঋণ পুরোপুরি আদায় না হওয়ার আগেই সুদ আয়খাতে নেয়াকে অর্টিীফিসিয়াল আয় বলা হয়। এই আর্টিফিসিয়াল আয়ের উপর ৩৭.৫০% ট্যাক্স সরকারকে প্রদান করা হয় । ঋণের অনাদায় যখন রাইট অফ করা হয় তখন সরকারকে দেয়া ট্যাক্স ফেরত নেয় হয় না। তাই এতবড় খরচের হাত থেকে বাচানোর জন্য ক্রেডিট মনিটরিং স্ট্রং করতে হবে। যে কোন ঋণদাতার ঋণ পরিশোধের ধরন দেখে ধারনা করা যায় ঋণটি শ্রেনীকরন করতে কত সময় লাগবে। ক্রেডিট মনিটরিং-এর জন্য ম্যানেজমেন্টকে ক্রেডিট এডমিনের উপর নির্ভর করতে হয় । যাই হোক ঋণ মনিটরিং-এর আওতায় রয়েছে যে সকল কাজ তা হলো অতীত বকেয়া এবং লিমিট অতিরিক্ত একাউন্টের তালিকা ম্যানেজেমেন্টকে দেয়া , সুদের ফি আদায় প্রভৃতির প্রতি মনিটরিং, ল্যান্ড ট্যাক্স, ড্রয়ই পাওয়ার যাচাই, স্টক ভেরিভিকেশন, নন-মর্গেজ তালিকা, ডেফারেল তালিকা প্রভৃতি।
সেন্ট্রালাইজড ক্রেডিট অডিট কমপ্লায়েন্স : সেন্ট্রালাইজড ক্রেডিট এডমিনের আরেকটি বিশেষ সুবিধা হলো, বাংলাদেশ ব্যাংক সহ সকল প্রকার ঋণের অডিট কম্প্রায়েন্স এক স্থান থেকে তদাকরি করা ও নিয়মিত করা। রেগুলেটরি অডিট টিম এক স্থানে বসে সকল প্রকার ঋণ সংক্রান্ত পর্যবেক্ষন তারা করতে পারে।
রেগুলেটরি রিপোর্টিং: – ঋণের শ্রেণীকরন ব্যবস্থাপনা সহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বহুবিধ রিপোর্টিং সেন্ট্রালাইজড ক্রেডিট এডমিন করতে পারে। আইএসএস ব্যবস্থা বিভাগের বিশেষ রির্পোটের অধিকাংশ যেহেতু ঋণ সংক্রান্ত সে হিসেবে আই এস এস টিম এই বিভাগের একটি অংশ হতে পারে পারে।
স্টক পরিদর্শন; স্টক পরির্দশনের জন্য ক্রেডিট এডমিনের আন্ডারের স্পেশাল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্টক পরিদর্শক দল ঋণ গ্রহীতা কাছে রক্ষিত ফাইনান্স করা স্টক পরিদর্শন করে। এতে বিসিনেস উনিট একটু হলেও কর্ম-চাপ কম থাকে। স্টক পরির্দশন হলো একধরনের মনিটরিং যা বিসিনেস উনিট করলে নতুর বিসিনেস করার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও ব্যাঘাত স্মৃষ্টি হয়।
ক্রেডিট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ফাংশন ব্যাক অফিস ফাংশন হলেও এর গুরুত্ব অত্যধিক। শক্তিশালী ক্রেডিট এডমিন যেমন ঋণের জামানতের সঠিকতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে তেমনি ভবিষ্যতে মন্দ ঋনের পরিমান বৃদ্ধি পাওয়া থেকে প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করে, ভবিষ্যতের সাম্ভাব্য মামলা খরচ কমায়। এই বিষয়টি প্রমানিত হয়েছে বহু আগেই । তাই বেশ কতগুলো ব্যাংক সেন্ট্রালইজড ক্রেডিট এডমিন প্রচলন করেছে ইতিমধ্যে যেমন- স্টান্ডার চার্টার, সিটি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ইস্টার্ণ ব্যাংক, মেঘনা, মিডল্যান্ড, সিমান্ত প্রভৃতি।
প্রতিটি ব্যাংকে ক্রেডিট এডমিন –এর দায়িত্ব জোরদার করার বিষয়ে সেন্ট্রাল ব্যাংক সহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নির্দেশনা রয়েছে। সংস্থাগুলো হলো – আইবিএস (ইন্টারন্যাশনার ব্যাংক ফর সেটলমেন্ট), আইএমএফ (ইন্টারন্যাশনার মনিটরি ফান্ড), বাসেল চুক্তি প্রভৃতি। এসকল সংস্থা ব্যাংকের ডকুমেন্টেশন শক্তিশালী হওয়ার জন্য বাংলাদেশের ব্যাংক ও নন ব্যাংক ফিনান্সসিয়াল প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরামর্শ দিয়েছে। এরা মনে করে ক্রেডিট এডমিন যত শক্তিশালী হবে ঋণের সিকিউরিটি ডকুমেন্ট তত শক্তিশালী হবে যা লিকুউডেশন বা মামলায় জেতার জন্য সাহায্য করবে। এছাড়া বাসেল গাইড অনুযায়ী ত্রুটি জনিত ডকুমেন্টের জন্য মালিক পক্ষকে ঋণের পুরো অর্থ অতিরিক্ত ক্যাপিটাল চার্জ করো কোর ক্যাপিটালে রাখা হয়। অতিরিক্ত ক্যাপিটাল চার্জ থেকে মালিক পক্ষকে রক্ষা করার জন্য ক্রেডিট এডমিনকে শক্তিশালী ও এর কাজকে সেন্ট্রালাইজড করা প্রয়োজন। এছাড়া হাইপো-আয়ের উপর ভিত্তি করে যে পরিমান ট্যাক্স সরকারকে দিতে হয় তা থেকে মালিক পক্ষকে রক্ষা করাও সেন্ট্রালাইজড ক্রেডিট এডমিনের ভুমিকা ব্যাপক।
সেন্ট্রলাইজড ক্রেডিট এডমিন – এর বেনেফিট
সেন্ট্রলাইজড ক্রেডিট এডমিন – এর বেশ কতগুলো বেনেফিট রয়েছে যেমন- ঋণের মুনাফা বৃদ্ধি করা, ক্রেডিট এডমিন সদস্যদের বহুমাত্রিক দক্ষতা অর্জন করানো, হিউম্যান রির্সোস ব্যায় কমানো, ট্রেনিং ব্যায় কমাতে সহায়তা করা, ত্রুটি কমাতে সাহায্য করা, অডিট ইন্সপেকশন সহজ করা, সহজতর ঋণ প্রদান প্রক্রিয়া নিরন্তর উদ্ভাবন করা, কর্পোরেট ঋণের দ্রুত সেবা প্রদান করা, যে কোন প্রকার খরচে স্বচ্ছতা আনা, সিন্ডিকেশন ঋণ প্রক্রিয়া সহজতর করা, ঋণ বিতরনে যেকোন ডিসপুট ই্যস্যুতে দ্রুত ঐক্যমত হওয়া, কেন্দ্রিয় ব্যাংককে দ্রুত তথ্য প্রদান করা প্রভৃতি।
ক) ঋণের মুনাফা বৃদ্ধি করে-
ব্যাংকের আয় হলো নিত্যদিনের চার্জ হওয়া সুদ বা মুনাফা। যে ঋণ যত দ্রুত বিতরন হবে সেই ঋণ থেকে ততদ্রুত সুদ বা মুনাফা আসতে শুরু করে। সেন্ট্রালাইজড ক্রেটিট এডমিন সবসময় ঋণ বিতরনে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং বেশি সুদ বা মুনাফা অর্জন করে।
খ) ক্রেডিট এডমিন সদস্যদের বহুমাত্রিক দক্ষতা বৃদ্ধি করে-
ঋণ ডকুমেন্টেশন ও বিতরন বিভাগের সদস্যদের বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হয়। বিশেষ করে যারা ডকুমেন্ট স্ক্রটুনি করে তাদের নানা ধরনের আইন জানতে হয়। ঋণ বাজারজাতকরন বিভাগের হয়তো এসব জ্ঞানের প্রয়োজন নেই তবে ডকুমেন্ট বিভাগকে অবশ্যই ঝুকি ঋণ রিকোভারি অভীজ্ঞতা, সংশ্লিস্ট আইন, প্রভৃতি সমন্ধে জানতে হয়। সেন্ট্রালাইজড ক্রেডিট এডমিনের সদস্যরা প্রতিনিয়ত নানা ধরনের সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিজেদের সমৃদ্ধ করে। এই বহুমাত্রিক দক্ষতা পরবর্তি ঋণের ক্ষেত্রে প্রয়োজন রয়েছে।
গ) হিউম্যান রির্সোস ব্যায় কমানো
এছাড়া সেন্ট্রালাজড ক্রেডিট এডমিনের সদস্যরা সব সময় নানা ধরনের ডিফিকাল্ট পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়। এসব পরিস্থিতি প্রত্যেক সদস্যদের জন্য প্রাক্টিক্যাল লার্নিং-এর সুযোগ করে দেয়। এতে তাদের বহুমাত্রিক দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে। এই দক্ষতা সম্পন্ন মানব সম্পদের কারনে প্রতিষ্ঠানের ব্যায় কমে।
ঘ) ট্রেনিং ব্যায় কমায়
শাখা ভিত্তিক ক্রেডিট এডমিন-এ প্রশিক্ষন ব্যায় বেশি হয়। লোক বল কম থাকার কারনে শাখার সকল সদস্যকেই ক্রেডিট এডমিনের দক্ষতাগুলো শেখানো হয় । হিসেব করলে দেখা যায় এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ব্যায়ের পরিমান বেশি হয়। সেন্ট্রালাইজড ক্রেডিট এডমিন-এ প্রশিক্ষন ব্যায় কম হয়।
ঙ) ত্রুটি কমাতে সাহায্য করে-
যেহেতু ক্রেডিট এডমিন একটি টেকনিক্যাল কাজ সেহেতু এখানে ত্রুটি হতে পারে । এটাই স্বাভাবিক। সেন্ট্রালাইজড ক্রেডিট এডমিন ত্রুটির পরিমান কম হয়। শাখা পর্যায়ের অফিসাররা নানা ধরনের কাজের কারনে ডকুমেন্টেশনের গভীরতায় যেতে পারে না । ফলে তাদের নানা ধরনের ভুল হতে থাকে। অপরদিকে সেন্ট্রালাইজড ক্রেডিট এডমিনের সদস্যারা যেহেতু ডকুমেন্টেশনের গভীরতা নিয়ে চিন্তা করে ফলে ফাইলে ভুলের পরিমান কম হয়। ফলে ভবিষ্যতে মামলা মোকাদ্দমাতে প্রতিষ্ঠান শক্ত অবস্থানে থাকে।
চ) অডিটের কাজ সহজতর করে-
সেন্ট্রালাইজড মুডে যেহেতু সকল প্রকার সিকিউরিটি ডকুমেন্ট সেন্টারে থাকে সেহেতু সকল প্রকার অডিট দলকে ঋণের ফাইল সহজে দেখানো সম্ভব হয় । অপরদিকে ইন্টারনাল অডিট সহজেই তাদের ফাইল দেখার সুযোগ পায় যেহেতু তারাও সেন্ট্রালাইজড। ট্রাভেল করে শাখাতে শাখাতে ছুটাছুটি করতে হয় না। ইন্টারনাল অডিট যত হবে তত কারেকশন হওয়ার সুযোগ সৃস্টি হয়। তাই অটিডের দৃষ্টিকোণ থেকে সেন্ট্রালাইজড অডিট খুবই প্রয়োজনীয়।
ছ ) ঋণ প্রদান প্রক্রিয়া সহজতর করে-
ঋণ প্রদান প্রক্রিয়া সহজতর করা সব ব্যাংকারদের জন্য প্রয়োজন। ঋণ প্রদান প্রক্রিয়া সহজতর করার জন্য প্রয়োজন দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহন। ক্রেডিট রিস্ক বা ডকুমেন্টেশন রিস্কের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধা্ন্ত নিতে না পারলে কখনই ঋণ দ্রুত প্রদান করা যাবে না। ক্রেডিট এডমিন যখন সেন্ট্রালাইজড হয় তখন ঋণের বিপরিতে সাম্ভাব্য জামানত যাচাই দ্রুত হয় ও ঋণ প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া দ্রুত হয়।
জ ) কর্পোরেট ঋণের দ্রুত সেবা প্রদান করে-
সেন্ট্রালাইজড ক্রেডিট এডমিনের মাধ্যমে কর্পোরেট ঋণ প্রদান সহজ ও দ্রুততার সহিত করা যায়। যেহেতু সকল কর্পোরেট হাউজগুলোর প্রধান অফিস রাজধানীতে হয় এবং ব্যাংকের প্রধান অফিসগুলো ঢাকাতে সেহেতু উভয় পক্ষের কমিউনিকেশন করা সহজতর হয়।
ঝ) ঋণের সিকিউটিরি স্বচ্ছতা করা-
ঋণের সিকিউটিরি স্বচ্ছতা ও সঠিকতার জন্য সেন্ট্রালাইজড ক্রেডিট এডমিন বেশ ভাল ভুমিকা রাখে। প্রায়শঃ হেড অফিসে বসে কিছু সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় ঋণের সিকিউরিটির অবস্থান ও তার মূল্য কত আছে জানাতে হলে শাখা অফিসের উপর নির্ভর করতে হয়। ফলে ঋণের সিকিউটিরি স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়। এমন অবস্থায় সেন্ট্রালাইজড ক্রেডিট এডমিন ঋণের সিকিউরিটির নানা তথ্য নিজেরাই সংগ্রহ করে ম্যানেজমেন্টকে প্রদান করতে পারে।
ঞ) সিন্ডিকেশন ঋণ প্রদান সহজে করে-
সিন্ডিকেট ঋণের লিড এরেন্জার সাধারনত: কোন বড় কর্পোরেট হাউজ বা ব্যাংক হয়ে থাকে যাদের প্রধানরা ঢাকাতে অবস্থান করে। অপরদিকে সকল পার্র্টিসিপেটর ব্যাংকের প্রধান অফিসগুলোও ঢাকাতে। ফলে ডকুমেন্টেশন জনিত যে কোন প্রকার সম্বনয় সাধন করার প্রয়োজন হলে তা সেন্ট্রালাইজড ক্রেডিট এডমিন ঢাকাতে অবস্থান করে সহজে সমাধান করে। এছাড়া সিন্ডিকেশন ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে ক্রেডিট শর্তাবলী নিশ্চিত করা ও নানা ধরনের পরিবর্তিত শর্ত প্রধান নির্বাহির সাথে আলোচনা-পর্যালোচনা করার প্রয়োজন হয়। এই ক্ষেত্রে সেন্ট্রালাইজড ক্রেডিট এডমিন এসব কাজ দ্রুত ও দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করতে পারে। শাখা পর্যায়ে সিন্ডিকেশন ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে নানা ধরনের গ্যাপ রেখে কখনও কখনও তারা ঋণ ডিসবার্স হয়। সেন্ট্রালাইজড ক্রেডিট এডমিন যে কোন প্রকার গ্যাপ পর্যালোচনা করে ও সমাধান করেই ঋণ ডিসবার্স দেয়। এছাড়াও সিন্ডিকেড ঋণের বেশ কিছু ইস্যু খাকে যা প্রতিনিয়ত মনিটর করতে হয়। শাখা পর্যারের ক্রেডিট এডমিনের পক্ষে তা সম্ভব হয় না।
ট) ঐক্যমত গঠন সহজে হয় –
ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে যে কোন বিষয়ে মতানৈক্য তৈরী হতে পারে । সেন্ট্রালাইজড ক্রেডিট এডমিন সহজে মতানৈক্য দুর করে ঐক্যমতে নিয়ে আসতে পারে।
ঠ) দ্রুত ও সঠিক তথ্য দিয়ে কেন্দ্রিয় ব্যাংকে সহায়তা করে-
যে সকল ব্যাংক সেন্ট্রালাইজড তাদের সাথে কম্পেয়ার করার দেখা যায় যে, সেন্ট্রালাইজড ক্রেডিট এডমিন সেন্ট্রাল ব্যাংকে দ্রুত ও সঠিক তথ্য প্র্রদান করে।
ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য, রিস্ক কমিয়ে ঋণ বিতরন করা ও শুপ্ত ব্যায় কমিয়ে প্রকৃতি প্রফিট বেড় করা। ব্যাংকের প্রকৃত আয় তাৎক্ষনাত দেখা যায় না । বেশ কয়েক বছর লাগে। এর জন্য প্রয়োজন দুরদর্শিতা ও দক্ষতা । দক্ষতার কোন বিকল্প নাই। সেন্ট্রালাইজড দক্ষ ক্রেডিট এডমিন একদিকে যেমন ঋণের ঝুকিঁ কমায় তেমনিভাবে ভবিষ্যতের সাম্ভাব্য মামলা খরচ কমায়। অপরদিকে পার্ফেক্ট ডকুমেন্টেশন ব্যাংক মালিকদের অতিরিক্ত ক্যাপিটাল চার্জ থেকে রক্ষা করে।
কাজী মাহমুদুর রহমান, ব্যাংকার
০১৯১৪০০৯৯৪৭,
qazi.mahmudur@gmail.com