পৃথিবীর বুকে মানুষ বসবাস করে হাজার বছর ধরে । একসময়ে বনে জঙ্গলে বসবাস করতো, তাদের কোনো থাকার জায়গা ছিল না, বনের পশু-পাখি, ফলমূল খেয়ে জীবন ধারণ করতো এবং তাদের নির্দিষ্ট কোনো পরিচয় বা গোত্র তেমন ছিল না। জীব জগতে মানুষ বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের চিন্তা-ভাবনা, জীবন ধারণ পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ তার জীবনকে প্রাণবন্ত করার জন্য নিত্য-নতুন আবিস্কার করছে, যা বসবাসকারী মানুষের সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ এবং সুখানুভূতি সৃষ্টির লক্ষ্যে। হাজার বছর পরে মানুষের আবিস্কার পৃথিবীকে দিয়েছে নতুন অধ্যায়, যা মানুষের বিজ্ঞান ভিত্তিক আবিষ্কারের উপর নির্ভরশীল। মানুষের নিত্য নতুন বিজ্ঞানের আবিষ্কার মানুষের কল্যাণের যেমন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে, তেমনি মানুষের এ আবিষ্কার ক্ষতিকর দিকও প্রকটিত হয়েছে। মানুষের এ আবিষ্কার চিন্তা চেতনাকে বিরাট পরিবর্তন সাধন করেছে। মানুষের ক্ষমতা, স্বীয়
জাত্যভিমানকে ধরে রাখার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের আবিষ্কারে নিজের স্বার্থের প্রয়োজনে ব্যবহার করছে। আজকে রাষ্ট্রে -রাষ্ট্রে, মানুষে-মানুষে মরণাস্ত্র ব্যবহার করছে, যা মানুষের জীবনকে বিপর্যস্থ এবং মন্দ চিন্তার প্রতিফলিত হচ্ছে মানুষের
জীবনে।
মানুষ স্বার্থরক্ষা, স্বার্থ আত্মসিদ্ধির জন্য মানুষ মানুষকে বেড়াজালের মারপ্যাচ দিয়ে বন্ধন করে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ, হয়রানি ও বিপর্যস্থ করে ফেলেছে। মানুষ তার স্বীয় কর্মের কারনে হোক বা প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে মানুষ -মানুষের প্রতি অবিশ্বাসে পরিণত করেছে। এতে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ বা অতি সাধারণ জনগণ, যারা কোনো রাজনৈতিক বা সরকারি প্রভাবে প্রভাবান্বিত না হয়ে জীবনকে ধারণ করার জন্য বেঁচে থাকার অধিকারটুকু হারিয়ে ফেলেছে । আমরা শৈশবে স্কুলে ভর্তি হয়েছি তখন জন্ম নিবন্ধন দিয়ে সব কাজ কর্ম সম্পাদন করেছি এবং মানুষও জীবন ধারণ করার প্রক্রিয়া হিসেবে জন্মনিবন্ধন
দিয়ে সকল কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের জনসাধারণ বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়ের পড়াশোনার সনদ দিয়ে জীবনকেও প্রাণবন্ত করেছে এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকেও জয়যুক্ত বা পরাজয় নির্ধারণ হয়েছে নির্বাচনের মাধ্যমে অর্থাৎ সাধারণ জনগণ ব্যালট পেপার দিয়ে প্রয়োগ করে ব্যালট বাক্সে পছন্দনীয় ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছে। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে বা রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে বাংলাদেশের সকল নাগরিকদের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা হয়েছে, যাতে নিজের অধিকারটুকু প্রয়োগ ঘটাতে পারে। তারই প্রয়োজন দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশে প্রথম পর্যায়ে অর্থাৎ ২০০৮ সালে দিকে প্রথম ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে তখন বাংলাদেশের প্রাইমারী, হাই স্কুলের শিক্ষকদের বা অন্যান্য প্রতিনিধিদের দ্বারা এ ভোটার তালিকা তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বাড়িতে, বাসায় ও বিভিন্ন পাড়া মহল্লায়। বাড়িতে উপস্থিত পরিবারের যারা সদস্য ছিলেন, তাদের নিকট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এবং ভোটার তালিকা প্রণয়ণের সময় কিছু চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার অপারেটর মাধ্যমে তালিকা প্রণয়ণ করা হয়, যা পরবর্তী জাতীয় পরিচয়পত্র হিসেবে সকলের নতুন এক ব্যক্তিগত পরিচয় বহণ করার মাধ্যম তৈরি হয়। এ জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে জনগণ তার ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশে সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ মাত্র সংযুক্ত হয়েছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। কিন্তু সবচাইতে বড় সমস্যা তৈরি হলো যখন আইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করার সময় তথ্যা সংগ্রহ যথাযথ হয়নি, শত শত মানুষের জন্ম তারিখ, পিতা মাতার নাম, নিজের নাম ভুলভাবে এ জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকাশিত হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের অত্যাধিক ভোগান্তি, দুর্ভোগ ও হয়রানির স্বীকার হতে হচ্ছেন প্রতিনিয়ত, যখন আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্রকে ব্যাংক, সিম ক্রয়-বিক্রয়, সকল প্রকার সরকারী লাইসেন্স, পার্সপোট ও চাকুরির ক্ষেত্রে শতভাগ ব্যধতামূলক করা হয় তখণ সংকটে পড়েছে এ জাতীয় পরিচয়পত্রের বাহককে। এ সমস্যা থেকে সাধারণ জনগণ রেহাই পাওয়ার জন্য সংশোধনের জন্য অনলাইনে বা নির্বাচন অফিসে গেলেই সহজেই সমাধান হয় না, তাতেই সাধারণ জনগণের অত্যন্ত হয়রানির স্বীকার এ জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনী নিয়ে।
শত শত যুবকদের চাকুরী হচ্ছে না জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুলের কারণে, শত শত যুবকের ভিসা ও পাসপোটের বিড়ম্বনার স্বীকার হচ্ছে, এবং পাসপোর্টও হয় না এমনকি ব্যাংকের একাউন্ট খুলতে পারছে না। নির্বাচন কমিশন ভোটার আইডির
সংশোধনের জন্য অনলাইনের নির্দিষ্ট ফি দিয়ে আবেদন করার জন্য উন্মুক্ত করে দিলেও মিলছে কাঙ্খিত সংশোধনের জাতীয় পরিচয়পত্র। এ ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে আমার ছোট ভাইয়ের ক্ষেত্রে। প্রথম অনলাইনে আবেদন করেছে আমিও
উপস্থিত ছিলাম , দুইমাসের অধিক হলেও সংশোধন হয়নি, অফিসে গিয়ে জানলাম আবেদন বাতিল হয়েছে। দ্বিতীয়বারও অনলাইনে আবেদন করেছে জন্মসনদ, পাসর্পোট, পিতা-মাতার আইডি ও ভাইবোনের আইডি দেওয়া হয়েছে এবং আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে গিয়ে বিভিন্ন অফিসে ঘুরে ঘুরে খুঁেজ নিলো নিজ এলালা ভিত্তিক অফিসে কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্রের কাঙ্খিত সংশোধনের প্রার্থীদের দীর্ঘ লম্বা অতিক্রম করে আবেদন পত্রটি জমা দিলেন, আবেদন সরাসরি অফিসার গ্রহণ করেনি তার সহকারী অফিস কর্মচারী সকলের আবেদন গ্রহণ করেছেন। অনুসন্ধিৎসু লোক, অনেক আকাঙ্খকিত ব্যক্তি অফিস সহকারীর কর্মচারীর কাছে জিজ্ঞেস করেছে, আমাদের আইডি সংশোধনের কাজটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হবেতো ? অফিস সহকারী কর্মচারী বললেন, হবে হবে, সব কাজ হবে। কিন্তু অল্প কিছুদিন পর মোবাইলের মেসেজ আসলো আপনার আবেদনটি বাতিল হয়েছে। তৃতীয়বার আবার অনলাইনে আবেদন করেছেন, এ অনলাইনে আবেদনের জন্য জাতীয় পত্রিকার হলফনাম, ম্যাজিস্ট্রেটের কর্তৃক স্বাক্ষরকৃত কোর্টের এফিডাফিট, জন্মসনদ, পার্সপোট, জমির খতিয়ান, ওয়ারিশ সনদপত্র, চেয়ারম্যানের প্রত্যায়ন পত্র, চেয়ারম্যানের সনদপত্র ও নির্দিষ্ট ফি দিয়ে আবেদন করেছেন । আবেদন করার পর বিভিন্ন পরিচিত ব্যক্তির কাছে বিভিন্নভাবে আকুতি প্রকাশ করা হলো দাদা, ভাই, কাকা বলে আবেদনটি একটু সংশোধনের ব্যবস্থা
করবেন। এমনটি অনেকজনের বলা হলো যদি অল্প কিছু টাকা লাগেও তাও দিবো, যদি সম্ভব হয় একটু জাতীয় পরিচয়পত্রটি সংশোধন করে দিবেন । কারন আইডির কোনো জায়গায় আমার চাকুরি হচ্ছে না, আমি অল্প শিক্ষিত , আমি ড্রাইভার
লাইসেন্স করে জীবন ধারণ করতে চাই, পারলে আমার পরিচয়পত্রটি সংশোধন করে দিবেন, অনেকজনের কাছে আকুতি জানালাম, এমনকি রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিকটেও আকুতি, মিনতি করা হলো কিন্তু কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুবিভাগের হেল্প লাইনে ১০৫ এ কয়েকবার কল করার পরও মেলেনি সমাধান। কিন্তু অনেকজনে জানালো গোপন সূত্রে লাখ টাকার বিনিময়ে সংশোধন করে দিবো । কিন্তু এতো টাকা দিয়ে জাতীয়
পরিচয় সংশোধন করাতো সম্ভপর নয় । অর্থ দিয়েও যে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন হবে তাও শতভাগ নিশ্চিয়তা নেই কারন এদেশের মানুষের টাকার লেনদেন মর্যাদা নেই, একজনের টাকার ফাঁদে পেলে টাকা আত্মসাৎ করে। তাই এখনো জাতীয় পরিচয় সংশোধনের ফাঁদে অনেক জীবন বিপর্যস্ত, বেকার ও অসহায় । এ সংশোধনের ফাঁদকে সুযোগ নিয়ে দুর্নীতি যেমন হচ্ছেন, তেমনি বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে । শুধুই বেকারত্ব নয় বিদেশ ভ্রমণ ও ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত ।
অর্থাৎ বলা যায় নাগরিক সুবিধা থেকেও বঞ্চিত জাতীয় পরিচয় পত্রের কারনে। তাই বলা যায়, পরিচয় সংশোধন ও নতুনের করার ক্ষেত্রে সহজীকরণ করলে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাবে নয়তবা জাতীয় পরিচয়কে যেকোনো কাজে
বাধ্যতামূলকবিহীন করতে হবে। না হয় এ দুভোর্গ থেকে মুক্তি পাবে না। আমাদের আবেদন পরিচয়পত্রের কারনে একজন যুবকের স্বপ্ন ভেঙ্গে না যায়। আশাকরি কল্যাণমুখী সরকার মানুষের মঙ্গলের চিন্তা করে সমস্যাটি সমাধানের পথ খুলে
দিবেন। স্বপ্ন বাস্তবায়ণ, সুখ ও সমৃদ্ধি দিকে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।