কমরেডস!
আসুন আমরা গভীরভাবে আমাদের অবস্থাটা ভেবে দেখি। আসুন আমরাপরীক্ষা করে দেখি কোন অবস্থার মধ্যে আমরা আমাদের জীবন যাপন করছি। আমরা কি দেখতে পাচ্ছি? আমরা দীর্ঘক্ষণ কঠোর পরিশ্রম করি। আমরা সীমাহীন সম্পদ, স্বর্ণ এবং পোশাক, সাটিন এবং সিল্ক উত্পাদন করি। মাটির গভীরথেকে আমরা লোহা ও কয়লা আহরণ করি। আমরা মেশিন তৈরি করি, আমরা জাহাজ তৈরি করি, আমরা রেলপথ নির্মাণ করি। পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ আমাদের হাতের, আমাদের রক্ত-ঘামের ফসল। আর এই বাধ্যতামূলক শ্রমের জন্য আমরা কী ধরনের মজুরি পাই? যদি সবকিছু ঠিকঠাক চলত, আমরা ভাল বাড়িতে বাস করতাম , আমরা ভাল পোশাক পরতাম এবং কখনই কোন অভাবের যন্ত্রণা ভোগ করতে হত না। কিন্তু আমরা ভালো করেই জানি যে আমাদের মজুরি আমাদের জীবনধারণের জন্য পর্যাপ্ত নয়। আমাদের মালিকরামজুরি কমিয়ে দেয়, আমাদের অতিরিক্ত সময় কাজ করতে বাধ্য করে, আমাদের উপর অন্যায্য জরিমানা করে – এক কথায় আমাদের উপর সব রকমের নিপীড়ন করে। এবং তারপরে যখন আমরা আমাদের অসন্তোষের কথা বলি, তখন কোন কথা ছাড়া আমাদের সোজা কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়।
নানা সময়ে আমাদের এই বিশ্বাস জন্মেছে যে আমরা যাদের কাছে সাহায্য চাই- তারাই মালিকদের চাকর এবং বন্ধু। তারা আমরা শ্রমিকদের অন্ধকারে রাখে, তারা আমাদের অজ্ঞ রাখে যাতে আমরা আমাদের অবস্থার উন্নতির জন্য লড়াই করার সাহস না করি। তারা আমাদের দাসত্বে রাখে। যারা নিপীড়কদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের কোন প্রকাশ ঘটায় – তাদের গ্রেফতার করে এবং কারারুদ্ধ করে –আমাদের জন্য সংগ্রাম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অজ্ঞতা এবং দাসত্বের মাধ্যমে পুঁজিবাদী এবং তাদের সেবক সরকার আমাদের উপর অত্যাচার করে।
শুধুমাত্র আমাদের উপর নির্ভর করুন
তাহলে কীভাবে আমরা আমাদের অবস্থার উন্নতি করতে পারি, আমাদের মজুরি বাড়াতে পারি, কাজের দিন ছোট করতে পারি, নিজেদেরকে অপমান থেকে রক্ষা করতে পারি, নিজেদের জন্য ভালো বই পড়ার সুযোগ পেতে পারি? সবাই আমাদের বিরুদ্ধে – এবং এই ভদ্রলোকদের অবস্থা যত ভালহয়, আমাদের হয় তত খারাপ! আমরা তাদের কাছ থেকে কিছুই আশা করতে পারি না, আমরা কেবল নিজের উপর নির্ভর করতে পারি। আমাদের শক্তি আমাদের ঐক্যে নিহিত , আমাদের পদ্ধতি হল মালিকদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ একরোখাপ্রতিরোধ। আমাদের প্রভুরা অবশ্যই বোঝেযে আমাদের শক্তি কোথায়। তাই তারা আমাদেরকে বিভক্ত করার এবং সমস্ত শ্রমিকের অভিন্ন স্বার্থের জায়গাটাগোপন করার জন্য সবরকম চেষ্টা করে।
কিন্তু এটা একটা লম্বা রাস্তা যার কোনো বাঁক নাই – এবং এমনকিসবচেয়ে কঠিন ধৈর্যের বাঁধও ভেঙ্গে যায়। গত কয়েক বছরে রাশিয়ান শ্রমিকরা তাদের মালিকদের দেখিয়েছে যে. ক্রীতদাসেরকাপুরুষতাএখন মানবের একরোখা সাহসেপরিবর্তিত হয়েছে, যারা পুঁজিপতিদের লোভের কাছে নতি স্বীকার করেনা। রাশিয়ার বিভিন্ন শহর জুড়ে একটি পুরো ধারাবাহিক ধর্মঘট হয়েছে। এই ধর্মঘটগুলির বেশিরভাগই সফলভাবে শেষ হয়েছিল, বিশেষ করে সেগুলো মালিকদের আতঙ্কিত করে তুলেছিল এবং তাদের ছাড় দিতে বাধ্য করেছিল। তারা দেখিয়েছিল যে আমরা আর কাপুরুষ গরিব নই বরং আমরা সংগ্রামে নেমেছি।
সকল দেশের শ্রমিকরা এক হও!
আমাদের বিবেকহীন শোষকদের লজ্জাজনক নিপীড়ন এবং প্রতারণার বিরুদ্ধে সংগ্রামে সমস্ত অপকর্ম উন্মোচন এবং অপসারণের লক্ষ্যে অনেক দোকান ও কারখানা শ্রমিকরা শ্রমিক শ্রেণীর মুক্তির জন্য সংগ্রামের লীগ সংগঠিত করেছে। লীগ যে লিফলেট বিতরণ করে তা দেখে মালিক এবং তাদের চাকর, পুলিশদের হৃদয় কেঁপে ওঠে। তারা এই লিফলেটগুলি দেখে ভীত নয় – তারা আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের সম্ভাবনায়, ইতিমধ্যে একাধিকবার প্রকাশিত আমাদের মহান শক্তির প্রকাশে আতঙ্কিত। আমরা, পিটার্সবার্গের শ্রমিকরা, লীগের সদস্যরা, আমাদের বাকি সব কমরেডদেরকে লীগে যোগদান করার জন্য এবং শ্রমিকশ্রেণীকে তাদের স্বার্থের সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ করার মহান কাজে সহযোগিতা করার আহ্বান জানাই। মালিক এবং সরকার আমাদের ওপর যে শেকলগুলো চাপিয়ে দিয়েছে, সেগুলো ভেঙ্গে ফেলার এখনই সময়।এখনই সময় যখন আমরা আমাদের অন্যান্য দেশের সহ-শ্রমিকদের সংগ্রামে যোগ দিই- একটি সাধারণ পতাকার নীচে যেখানে খচিত আছে: “সকল দেশের শ্রমিকরা, এক হও!” –
ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, জার্মানি এবং অন্যান্য দেশে যেখানে শ্রমিকরা ইতিমধ্যেইসংগঠিত করেছে এবং গুরুত্বপূর্ণ অধিকার জিতে নিয়েছে, সেখানে মে মাসের প্রথম দিন হল সাধারণ ছুটি।
শ্রমিকরা অন্ধকার কারখানা ছেড়ে প্রধান রাস্তায় পতাকা ও সঙ্গীত নিয়ে সুশৃঙ্খল লাইনে প্যারেড করে। তারা তাদের মালিকদের দেখায় যে তাদের ক্ষমতা কতটাশক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তারা বক্তৃতা শোনার জন্য অসংখ্য জনাকীর্ণ সমাবেশে যোগদান করে। সেখানে মালিকদের সাথে লড়াইয়েঅর্জিত বিজয়গুলো সম্পর্কে বর্ণনা করা হয় এবং ভবিষ্যতের সংগ্রামের পরিকল্পনা তৈরি করা হয়।
এই দিনে কাজে অনুপস্থিতির জন্যশ্রমিকদের কোনো ব্যক্তিগত জরিমানা বা শাস্তি দেওয়ার সাহস মালিকরা করে না। কারণ তারা ধর্মঘটের ভয় পায়। এই দিনে শ্রমিকরাও তাদের প্রধান দাবি “আট ঘন্টা কর্মদিবস।”
মালিকদের মুখের ওপর ঘোষণা করে।
প্রভু বা দাস ছাড়া একটি সমাজ
অন্যান্য দেশে শ্রমিকরা ইতিমধ্যে এটি ঘোষণা করছে। খুব বেশি দিন আগে নয়, একটা সময় ছিল – যখন আমরা যে অধিকারগুলো থেকে, আমাদের চাহিদাগুলোর জন্য সোচ্চার হওয়ার অধিকার থেকে এখন বঞ্চিত, তাদেরও তাছিল না, যখন তারা আমাদের এখনকার মতোই দাসত্বে ছিল। কিন্তু নিরলস সংগ্রাম ও প্রচণ্ড আত্মত্যাগের মাধ্যমে তারা সম্মিলিতভাবে শ্রমসংক্রান্ত বিষয়গুলো হাতে নেয়ারঅধিকার অর্জন করেছে। আসুন, আমরা এই শুভকামনা করি যে, আমাদের ভাইদের সংগ্রাম শীঘ্রই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাবে, এমন একটি সমাজে যেখানে কোন প্রভু থাকবে না এবং কোন দাস থাকবে না, কোন পুঁজিপতি থাকবে না এবং কোন মজুরি শ্রমিক থাকবে না, তবে সবাই একসাথে কাজ করবে এবং সবাই একসাথে জীবনের ভাল জিনিসগুলি উপভোগ করবে।
কমরেডগণ, আমরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে এবং একত্রিত হয়ে লড়াই করি, তাহলে সেই সময় খুব বেশি দূরে নয় যখন আমরাও জাতি-ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ না করে সমগ্র বিশ্বের পুঁজিবাদীদের বিরুদ্ধে সকল দেশের শ্রমিকদের অভিন্ন সংগ্রামে প্রকাশ্যে যোগ দিতে পারব। আমাদের শক্তিশালী বাহু উত্তোলিত হবে এবং দাসত্বের শৃঙ্খল খসে পড়বে। রাশিয়ার মেহনতিরা জেগে উঠবে এবং পুঁজিপতিদের এবং শ্রমিক শ্রেণীর অন্যান্য শত্রুদের বুকে আতঙ্ক সৃষ্টি করবে ।
শ্রমিক শ্রেণীর মুক্তির জন্য সংগ্রামের লীগ
পিটার্সবার্গ, ১ মে, ১৮৯৮