বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর মতো কঠিন হৃদয় সন্তানের মধ্যে তৈরী করা হয়, জন্ম হয় না। এই তৈরী করার জন্য উক্ত বাবা-মা শতভাগ দায়ী। সমাজের কিছু ভ্রান্ত ধারণাও এর জন্য দায়ী। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে বাংলাদেশে বৃদ্ধাশ্রম জনিত আইন অসম্পন্ন রয়েই গেল। কারন বাবা-মা শিশুদের শাস্তির মাধ্যমে শিশুর মনকে বিষিয়ে তোলে যার পরিনতি দেখা দেয় বাব-মায়ের বৃদ্ধ বয়েসে। শৈশবে নানা ধরনের শাস্তি শিশুদের দেয়া হয়। তারমধ্যে মানসিক শাস্তিগুলো মনের গভিরে দাগ রেখে যায়। ভায়োলেন্স ভায়োলেন্স-এর জন্ম দেয়। বিশেষ করে শাস্তি পাওয়া শিশুরা প্রতিশোধ পরায়ন হয় । যে শিক্ষক শিশুদের পেটায় সেই শিক্ষকের সন্তানকে পেটানোর বাসনা অধিকাংশ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা লালন করে। সুধু তাই নয় জীবনে যদি কখনও সুযোগ পায় তাহলে সেই শিক্ষকের প্রতি প্রতিশোধ নেয়, সম্মানতো দুরের কথা। মানষিক শাস্তিগুলো কী কী হতে পারে ? বকাঝকা, না-বুঝে মুখস্থ করা, কাচা-ঘুম থেকে উঠা, খেলতে না দেয়া, ভয় দেখানো, ভবিষ্যত ক্যারিয়ারের বোঝা চাপানো, অন্যকারো সাথে তুলনা করা, অবাঞ্চিত বিষয় পাঠ করা প্রভৃতি। শাস্তির ফলে বাবা-মায়ের সাথে সন্তানের বন্ধু সর্ম্পক তৈরী হয় না। বন্ধুর মত বাবা-মাকে সন্তানরা কখনও ফেলতে পারে না- বৃদ্ধাশ্রমতো দুরের কথা। নিজের হাতে অসুস্থ বাবা-মায়ে বিছানা থেকে মলমুত্র পরিস্কার করতে দেখেছি অনেক সন্তানকে । আবার এটাও দেখেছি হসপিটালে ভাড়া করা বুয়া দিয়ে মায়ের সেবা করাতে এবং বউ-এর সাথে নাক ডেকে ঘুমাতে সন্তানকে। বাবা-মায়ের প্রতি এ সব নেতিবাচক মনোভাবের জন্ম বাবা-মাই তৈরী করে দিয়েছে। সন্তানরা অনিচ্ছা সত্তেও বাবা-মায়ের প্রতি নেতিবাচক আচরন করে ফেলে ও পরবর্তিতে কৃতকর্মের জন্য সেই সন্তানরা আফসোসও করে। মনের ভেতরে জমে থাকা শৈশবের পোস্ট ট্রমাটিক মেমোরি তাকে বাবা-মায়ের প্রতি অনিহা তৈরী করতে সহায়তা করে ও নেতিবাচক আচরন ঘটায়। পরবর্তিতে বিবেকের কারনে নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করে। এমতবস্থায়, এই ধরনের সন্তানরা মনো চিকিৎসা (সাইকোথেরাপি) নিতে পারেন। ইএমডিআর সাইকোথেরাপি পোস্ট ট্রমাটিক মেমোরি দ্রুত রিমুভ করতে সহায়তা করে। মজার বিষয় হলো সরকারের কোন আইনে এই বিষয়গুলো বিবেচনায় আনা হয়নি।
সরকার “পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩” নামক আইন তৈরী করেছে যেখানে ধারা-৩-এ বলা হয়েছে যে, (১) প্রত্যেক সন্তানকে তাহার পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করিতে হইবে। (২) কোন পিতা-মাতার একাধিক সন্তান থাকিলে সেইক্ষেত্রে সন্তানগণ নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করিয়া তাহাদের পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করিবে।(৩) এই ধারার অধীন পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করিবার ক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানকে পিতা-মাতার একইসঙ্গে একই স্থানে বসবাস নিশ্চিত করিতে হইবে। (৪) কোন সন্তান তাহার পিতা বা মাতাকে বা উভয়কে তাহার, বা ক্ষেত্রমত, তাহাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে, কোন বৃদ্ধ নিবাস কিংবা অন্য কোথাও একত্রে কিংবা আলাদা আলাদাভাবে বসবাস করিতে বাধ্য করিবে না।”
মনের ভেতরের ক্ষত সারানোর বিষয়টি আইনের কোথাও উল্লেখ নেই। ভেতরের ক্ষত না সারিয়ে আইন করলে তা হবে আরেক ধরনের ইনইকুইলিটি (অন্যায্যতা)। অন্যায্যতা হলো আইনের বিপরীতমুখি ভাইরাস। এইক্ষেত্রে আইন দ্বারা বাধ্য হয়ে বাবা-মায়ের সেবা হবে এক ধরনের মেকানিকাল দায়িত্ব – যেখানে থাকবে না ভালবাসা। ফলে আরেকটি অপরাধ তৈরী হবার সম্ভাবনা রয়েই যাচ্ছে। এর অর্থ হলো – একটি আইন আরেকটি অপরাধ ঘটাতে সহয়তা করছে। অনুরোধ রইলো আইন মন্ত্রালয়ের প্রতি – তারা যেন প্রত্যেক আইনে মানুষের মানসিক বিষয়গুলো আরো বিবেচনায় এনে আইন তৈরী করেন। “পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩ সংশোধন করে প্রত্যেক বাবা-মায়ের বিশেষ করে মায়েদের মর্যাদাকে অক্ষুন্ন রাখার অংগিকার হোক আজকের মা দিবস-২০২৩ এর মুল উদ্দেশ্য। শুভহোক মা দিবস। আরো শুভহোক আগামী কালের পরিবার দিবস।
লেখক- সাইকোথেরাপিস্ট
সাইকোথেরাপি সার্ভিসেস
psychotherapyservicesbd@gmail.com
ঢাকা।