আজ থেকে শুরু হচ্ছে রুপিতে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় লেনদেন। এতে কমে আসবে ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা এবং বছরে বাংলাদেশের সাশ্রয় হবে ২০০ কোটি ডলার। দুই দেশের দুটি করে চারটি ব্যাংকের মাধ্যমে শুরু হবে এ লেনদেন। টাকা-রুপির বিনিময় হারের রেট নির্ধারিত হবে আন্তঃসীমান্ত মুদ্রার ভিত্তিতে। এতে খরচ কমবে ব্যবসায়ীদের। লেনদেন নিষ্পত্তি হবে সুইফটের মাধ্যমে।
ধারণা করা হচ্ছে, এ উদ্যোগ আমদানিকারকদের ডলারের চাপ থেকে কিছুটা হলেও রেহাই দেবে। তারা প্রতিবেশী দেশ থেকে পণ্যের একটি অংশ আমদানি করতে রুপিতে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারবেন। এভাবে শুরু হলে মার্কিন ডলারের ব্যবহার কিছুটা কমিয়ে দেওয়া যাবে।
মার্কিন ডলার ঘাটতির কারণে সরকার আমদানি বিধি কঠোর করেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখতে আমদানি বিল পরিশোধ এক বছর আগের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে।
রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে রুপিতে বাণিজ্য শুরুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ ও ভারতের কর্মকর্তারা। ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে দুই দেশ এই উদ্যোগ নিয়েছে। এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের তামিম অ্যাগ্রো ও ব্যবসায়ী শাহজাহান মিয়াকে এলসি দেওয়া হয়। পরে সোনালী ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক এবং ভারতের স্টেট ব্যাংক ও আইসিআইসি ব্যাংক আমদানি ও রপ্তানিকারকদের হাতে এই এলসি তুলে দেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক, বেসরকারি খাতের ইস্টার্ন ব্যাংক ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (এসবিআই) বাংলাদেশ শাখাকে ভারতের আইসিআইসি ব্যাংক এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংক ইস্টার্ন ব্যাংক এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার কান্ট্রি অফিস ইতোমধ্যে ভারতীয় আইসিআইসিআই ব্যাংক এবং এসবিআইর সঙ্গে নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট খুলেছে। রাষ্ট্র মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক দ্রুততম সময়ে অ্যাকাউন্ট খুলবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক) উভয়ই ভারতীয় রুপিতে (আইএনআর) দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য নিষ্পত্তি শুরু করতে দুটি ভারতীয় ব্যাংককে অনুমতি দিয়েছে।
নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রায় বিদেশের দায়-দেনা পরিশোধের জন্য বিদেশের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর অ্যাকাউন্ট। এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে গ্রাহকের পক্ষে বিদেশি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে সংশ্লিষ্ট পণ্য বিক্রেতার এলসি মূল্য পরিশোধ করা হয়। আবার রপ্তানি বিল ও রেমিট্যান্সের অর্থ ওই নস্ট্রো অ্যাকাউন্টে যোগ হয়। গত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেছিলেন, বাংলাদেশ রুপিতে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য করতে চাইছে। এটি রপ্তানি আয়ের সমপরিমাণ অর্থের। ভারত থেকে বাংলাদেশের রপ্তানির চেয়ে আমদানি অনেক বেশি। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের আমদানির বিপরীতে রপ্তানি হয় ২০০ কোটি ডলারের পণ্য।