গত ১১ মে, ২০২৪ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রাণপ্রতিম, বিশিষ্ট মার্কসবাদী তাত্ত্বিক, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, ছাত্র-শ্রমিক-শোষিত মানুষের শ্রেণি সংগ্রাম তথা সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সামনের কাতারে থাকা কমরেড হায়দার আকবর খান রনো’র দেহাবশানে এক গভীর শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। সারা দেশ যখন তাঁর মৃত্যুশোকে কাতর, সেই সময় সোশ্যাল মিডিয়াতে সদ্য অনন্তগামী কমরেড রনোর স্মৃতির উদ্দেশ্যে জনাব ফরহাদ মজহারের ‘শোক বার্তা’য় দৃষ্টি নিবদ্ধ হল। চরম শত্রুর মৃত্যুতেও তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং শোক প্রকাশ আমাদের জাতিগতভাবে প্রাপ্ত সাধারণ সৌজন্য আর পরম্পরা। কিন্তু পাঠমাত্র বোধগম্য হল যে, এটি শোক প্রকাশ নয় বরং শোক প্রকাশের ছলে, জনাব মজহারের নিজস্ব বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানের জন্য উদ্দেশ্যমূলক মায়া কান্না।
তার এই তথাকথিত ‘শোক প্রকাশকে’ গভীর অর্থে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কমিউনিস্ট আন্দোলনের গুরুত্বকে অস্বীকার করা, বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা, হেয়-তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার যে ‘প্রজেক্ট’ তিনি পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন, তারই অংশ। কমরেড রনোর অনুপস্থিতিতে জনাব মজহারের এই মায়া কান্না প্রকৃত পক্ষে একটা মজবুত ‘হাত-পা বাঁধা রাজনৈতিক-দার্শনিক’ চপেটাঘাতের দাবি করে। এটা সত্য যে, কমরেড রনোই ছিলেন সেই দাবি পূরণের যোগ্যতম ব্যক্তি। কমরেড রনো বেঁচে থাকলে, জনাব মজহারকে সেই জবাবের উপযুক্ত বিবেচনা করতেন কিনা বলা মুশকিল। কিন্তু জনাব মজহারের জেনে রাখা ভালো যে, কমরেড রনোকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলন তথা সামগ্রিক বামপন্থার সংগ্রামী ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্নভাবে উপস্থিত করে, তাঁর অনুপস্থিতির সুযোগে তাঁকে নিতান্তই গোবেচারা ভালো মানুষ হিসাবে চাটুকারিতা করে, ফাঁকামাঠে গোল দেবার কোন চেষ্টাই ফলপ্রসূ হবে না।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, জনাব মজহার, কমরেড রনোর অনুপস্থিতিকেই বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কমিউনিস্ট আন্দোলন, মার্কসবাদী আন্দোলন, কমরেড রনোর পড়াশুনা জ্ঞান ও প্রজ্ঞার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন বিষয়ে তাঁর স্থুল প্রপাগান্ডার মোক্ষম সময় হিসাবে বেছে নিয়েছেন। কথায় বলে, খলের ছলের অভাব হয় না। শোক প্রকাশের অজুহাতে কমরেড রনোর মার্কসবাদী জ্ঞান ও পড়াশুনা নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুধু অভদ্রতাই নয়, প্রকৃত অর্থে কমিউনিস্ট রনোর অতীত ভূমিকা এবং অবদানকে মোকাবেলার ভয়ে ভীতির এক বিকৃত প্রকাশ। কেননা যতদূর জানা যায়, কমরেড রনোর লিখে যাওয়া ত্রিশের অধিক পুস্তক বাজারে বিদ্যমান এবং এখনো অনাবিষ্কৃত অসংখ্য লেখা আমাদের চারপাশে স্বশরীরে আছে। জনাব মজহারসহ যে কেউ চাইলে বা প্রয়োজন মনে করলে, সেইসব লেখার সমালোচনা করে নিজের বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতা প্রমান করতে পারেন। তাতে আমরা অনেকেই আলোকিতও হতে পারি। জনাব মজহারের ‘সর্বজ্ঞানী দাদার’ আসন দখলের মরণপণ আগ্রহ দেখে, তার প্রতি কমরেড রনোর লিখে যাওয়া যে কোন বিষয়ে কথা বলার যুক্তিসম্মত পথে হাঁটার সাহস দেখাবার খোলা আহবান থাকলো।
জনাব মজহার তার ‘শোক প্রকাশের’ বয়ানে অযাচিতভাবেই তার নিজের প্রতি কমরেড রনোর ‘রাগ’ ছিল এবং তিনি কমরেড রনোকে অনেক কিছুই শেখাতে পারেননি বলে, কুম্ভীরাশ্রু বর্ষণ করেছেন।
জনাব মজহারের এই স্বকল্পিত অভিযোগ নিতান্তই হাস্যকর। তবে এটা ঠিক যে, কমরেড রনোর ‘ভীষণ রাগ’ ছিল ঘুনে ধরা চলমান সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতি, কেননা এই সমাজ ভেঙে নুতন শোষণ বৈষম্যহীন সমাজ গড়াই ছিল তার আজন্ম লালিত স্বপ্ন। আবার তাঁর ‘রাগ’ ছিল নিজের প্রতিও। নিজের প্রতি রাগ ছিল, এই পঁচা-গলা সমাজটা ভাঙার সংগ্রামে কার্যকরী ভূমিকা পালন করার দুর্বলতার জন্য, সমাজ-রাষ্ট্র ভাঙার সংগ্রামের গতিপথে মার্কসবাদী দর্শনকে সৃজনশীলভাবে প্রয়োগ করতে পারার দুর্বলতার জন্য। সেখানে জনাব মজহারের প্রতি রাগ থাকা নিতান্তই অপ্রাসঙ্গিক। এটা আরো অপ্রাসঙ্গিক একারণে যে, বাংলাদেশের গণমুক্তির আন্দোলন, সমাজতন্ত্রের আন্দোলনে জনাব মজহার কাছ থেকে চাওয়া-পাওয়ার কোন আশাবাদ কমরেড রনোর ছিল বলে জানা যায় না। বলাইবাহুল্য ‘রাগের’ প্রশ্নে জনাব ফরহাদ মজহার নামটি কমরেড রনোর কাছে ছিল অপাংতেয়। একেবারেই দূর-দুরস্ত।
আর কমরেড রনোকে ‘শেখাতে’ না পারার জন্য জনাব মজহারের হা-হুতাশ প্রকাশটাও বেশ হাস্যকর। কমরেড রনোর চরম শত্রুও তাঁর অদম্য শিক্ষা গ্রহণ আকাঙ্ক্ষা ও শিক্ষা প্রদানের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন না। কমরেড রনো আমাদের মধ্যে শুধুমাত্র ‘ক্যাপিটাল’ পড়া, মার্কস-লেনিন পড়া কমিউনিস্টই ছিলেন না। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত, নাকে অক্সিজেন নল লাগিয়ে, ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে অন্ধত্ব বরণ করে নেবার পরও শেখা-লেখা ও শেখাবার যে দৃষ্টান্ত তিনি রেখেছেন- তা সম্ভবতঃ অনতিক্রম্য। কিন্তু জনাব মজহারের জেনে রাখা ভালো যে, পড়া ও শেখা সম্পর্কে তার দর্শন ছিল আত্ম-অহংকারী জনাব মজহারের চাইতে ভিন্ন। মার্কসবাদ পড়াটা কমরেড রনোকে একটুও অহংকারি করেনি। কমরেড রনো জানতেন, বর্তমান পৃথিবীতে ‘মার্কসবাদ পড়া’ পণ্ডিতের সংখ্যা অতীতের যে কোন সময়ের চাইতে বেশি। এইসব পন্ডিতদের অনেকেই মার্কসবাদ খণ্ডন করার জন্য পড়েন, অনেকে জীবনধারণের জন্য পড়েন, অনেকে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য পড়েন কিন্তু যে কারণেই হোক না কেন, সেইসব মার্কসবাদী পণ্ডিতদের উপস্থিতি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের বা ব্যবস্থা পরিবর্তনের সংগ্রামের কিছু যায় আসে না। সেকারনে কমরেড রনো মার্কসবাদ পড়ার গুরুত্ব সর্বাংশে স্বীকার করলেও, পড়া-গবেষণা-আর প্রাত্যহিক সংগ্রামের অনুশীলনের কষ্টিপাথরে শিক্ষাকে যাচাই করার পদ্ধতিতে বিশ্বাস করতেন। এই মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গীগত পার্থক্যের কারনেই জনাব মজহারের সীমাবদ্ধতা মানুষের কাছে দিনের আলোর মত স্পষ্ট।
মার্কস নিজে মার্কসবাদী ছিলেন কিনা, দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদ আসলে মার্কসবাদ কিনা অথবা মার্কসবাদ আসলেই কি বস্তু – তা নিয়ে জনাব মজহারের পাণ্ডিত্যপূর্ণ ফ্যালাসি তৈরীর পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে এবং সেসব সম্ভবত তার গৃহীত প্রজেক্টের সাথেও সঙ্গতিপূর্ণ। কিন্তু আমরা মার্কসবাদীরা, সমাজতন্ত্র বিনির্মাণ ও সাম্যবাদ অর্জনের লক্ষ্যে মার্কসবাদী বিজ্ঞানকেই সচল দার্শনিক বীক্ষা হিসাবে গ্রহণ করেছি। কারন আজকের পৃথিবীতে, এমনকি পুঁজিবাদীরাও নিজেদের অভ্যন্তরীণ সংকট থেকে সাময়িক পরিত্রান পেতে হর-হামেশাই ‘মার্কসবাদী পন্ডিতদের’ দ্বারস্থ হচ্ছে। আর সম্ভবতঃ সেকারনেই মজহার সাহেবদের এখনো বাজারে একটা চলতি আছে। অন্যদিকে আমাদের মত দেশসহ পৃথিবীর সর্বত্রই শোষণ-বৈষম্য থেকে মুক্তি এবং সমাজ বদলের সংগ্রামে শ্রমজীবী মানুষের কাছে, বৈজ্ঞানিক মার্কসবাদের সৃজনশীল প্রয়োগই হল অত্যাধুনিক অব্যর্থ হাতিয়ার।
আর সে কারণেই কমরেড রনোর বেড়ে ওঠা, ছাত্র আন্দোলন-শ্রমিক আন্দোলন তথা শ্রেণিসংগ্রামে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থাকাটাই ছিল মার্কসবাদ চর্চার ক্ষেত্রে তাঁর প্রধানতম অগ্রাধিকারের দিক; শুধু ঘরে বসে অথবা সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে প্রধান আলোচকের আসন অলংকৃত করা নয়। এই মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্যটি জনাব মজহারের মত পণ্ডিতের বুঝতে না পারার কথা নয়।
জনাব মজহার কমরেড রনোকে শেখাবার জন্যই নাকি বলেছিলেন, “আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিতে ধর্মের অর্থ ও তারপর্য্য আর বিপরীতে খ্রিস্টীয় পাশ্চাত্যের religion এক কথা না।” জনাব মজহারের এই ‘বিশাল আবিষ্কার’ উত্থাপনের পর কমরেড রনোর হতভম্ব হয়ে পড়ার সাল তারিখ বিহীন দাবিটি নিতান্তই দ্বিপাক্ষিক বিধায় তাকে ‘benefit of doubt’-এর পর্যায়ে রেখেই কমরেড রনোর ‘দর্শন বিষয়ক কতিপয় রচনা’ পুস্তকটি পড়ে দেখার অনুরোধ সনির্বন্ধ থাকলো।
জনাব মজহার ইসলাম ধর্মতত্ব পর্যালোচনার ভেতর দিয়ে বিপ্লব সংঘঠনের যে প্রজেক্ট নিয়েছেন এবং তার ভাষায়- “… বিপ্লবী গণরাজনৈতিক ধারার মশাল বহন করার” যে ঘোষণা দিয়েছেন, তাতে কমরেড রনোসহ কারো তেমন কোন তাপ-উত্তাপ দেখিনি। কিন্তু মজহার সাহেবের অভিযোগ কমরেড রনো তাঁকে ‘মৌলবাদী ও ইসলামপন্থী’ মনে করতেন। তাঁর এই অভিযোগ শুনে মনে হচ্ছে, মজহার সাহেব ‘মৌলবাদী ও ইসলামপন্থী’ সম্বোধনটি পছন্দ করছেন না। কিন্তু যিনি চিরায়ত ধর্মতত্বের সাথে ‘রাজনৈতিক ধর্মতত্বের’ পার্থক্য অনুধাবনে ব্যর্থ, যিনি ঢাকার রাজপথে প্রতিদিন ভাসমান অসংগঠিত শ্রমজীবী মানুষের বেঁচে থাকার লড়াইয়ে নিশ্চুপ থেকে, ‘রাজনৈতিক ইসলামপন্থী’দের গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য ‘প্রগতিশীল ন্যারেটিভ’ নির্মাণে প্রাণাতিপাত করছেন তাকে ‘মৌলবাদী ও ইসলামপন্থী’ না ডেকে কি উপায় থাকে? জনাব মজহার তার নিজের গড়ে তোলা প্রাপ্য নামের ডাক শুনে অন্যের প্রতি অভিযোগ না করে, নিজের দিকে তাকালেই ভালো করবেন। আর সত্যিই যদি ‘মৌলবাদী ও ইলামপন্থী’ ডাকে তাঁর এত আপত্তি থাকে, তাহলে নিজের কাজ দিয়েই সেই কাফ্ফারা দিতে হবে। কেননা, সেটাই হবে তার জন্য সহজতর পথ। আর একটু খুলে বললে বলতে হয়, সেই সহজতর কিন্তু কঠিন পথটি হল: শ্রেণী সংগ্রাম ও গণসংগ্রামের পথ। এখন জনাব মজহারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তিনি ঘরে বসে ধর্মতত্ব পর্যালোচনা করেই বিপ্লব সম্পন্ন করবেন নাকি রাস্তায় নেমে শ্রেণী সংগ্রামের তেজ উপলব্ধি করবেন।
কমরেড মাও সে তুং-এর প্রসঙ্গ টেনে, মজহার সাহেব বাংলাদেশে বিপ্লবী গণলাইন চর্চার যে ডাক দিয়েছেন, ইসলাম ধর্মতত্ব পর্যালোচনার যে ‘বিপ্লবী’ উদ্যোগ তিনি নিয়েছেন, তার সাথে আমরা পরিষ্কারভাবে ভিন্নমত পোষণ করি। মজহার সাহেব কি বুঝেছেন আর কি বলছেন বলা মুশকিল। তবে কমরেড মাও এর গণলাইন চর্চার মর্মবস্তু ছিল জনগনের কাছ থেকে শেখা ও জনগনের চেতনার স্তর উপলব্ধি করে, চীনা বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন পথে বিপ্লবী আন্দোলন-সংগ্রামকে পরিচালিত করা। কমরেড মাও কোনক্রমেই গণলাইন অনুসরণের নামে, অগ্রগামী কমিউনিস্ট ভাবধারাকে পশ্চাদপদ সামন্ততান্ত্রিক ভাবধারার কাছে আত্মাহুতি দিতে বলেননি। জনাব মজহার নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, কমরেড রনো ‘ওয়ার অন টেরর’ এর নামে পরিচালিত সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তের বিষয়ে সচেতন ছিলেন, শুধু তাই নয়, তিনি ধর্মপন্থীদের দ্বারা সৃষ্ট ‘সেকুলারিজম ও ধর্মের’ কৃত্রিম দ্বন্দের বিষয়েও সচেতন ছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তবে বলাই বাহুল্য, সবজান্তা বুদ্ধিজীবীর স্বাতন্ত্রতা প্রদর্শন করতে, জনাব মজহার সেই লড়াইয়ে ধর্মপন্থীদেরই পক্ষাবলম্বন করেছেন। আর এখানেই জনাব মজহারের চিন্তার সচেতন বন্ধ্যাত্ব স্পষ্ট।
জনাব মজহারকে জানিয়ে রাখা ভালো যে, ধর্মতত্ব পর্যালোচনার ভেতর দিয়ে তিনি যে গণলাইন অনুসরণ করে, যে বিপ্লবী গণরাজনৈতিক ধারার মশাল বহন করে চলেছেন তাতে আমাদের কিছু হারাবার ভয় দেখিনা। কেননা আমরা কমিউনিস্টরাও কায়মনোবাক্যে মার্কসবাদের সৃজনশীল বাংলাদেশীকরণের অনুশীলনে রত আছি। কমরেড রনোর চিন্তার অনেকটা জায়গা জুড়ে ছিল এই ভাবনা। বৈজ্ঞানিক বৈশিষ্টসম্পন্ন শ্রমিক শ্রেণীর স্বাধীন পার্টিকে গণমানুষের নিকটবর্তী করতে দেশের কৃষ্টি-কালচার-ঐতিহ্য-ধর্ম ইত্যাদির রস সংগ্রহ করে তাকে চলমান বিপ্লবী রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রতিস্থাপনের প্রচেষ্টায় অনেকের সাথে কমরেড রনো নিজেও ব্যাপ্ত ছিলেন। আজ তাঁর অনুপস্থিতিতে, তাঁর সহযোদ্ধা কমরেডরা শহরে ও গ্রামে, কারখানায় ও ছিন্নমূল ভাসমান শোষিতের বস্তিতে সংগ্রামকে এগিয়ে নেবার কাজ করে চলেছে।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কমিউনিস্ট আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যকে অস্বীকার করে, জাতির অতীত ও বর্তমান গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন সংগ্রামের বাঁকে বাঁকে কমিউনিস্টদের অবদানকে ছোট করে, কমরেড রনোকে নিতান্তই সাদাসিধে ভালো মানুষ হিসাবে তুলে ধরাটা উদ্দেশ্যমূলক। কমরেড রনো কমিউনিস্ট আন্দোলনেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। তার ভালো মন্দের গাঁথা, সফলতা-দুর্বলতার খতিয়ান সবই এক সুতোয় বাঁধা। সুতরাং কমরেড রনোর মৃত্যুর অজুহাতে কুম্ভীরাশ্রু বর্ষণ বন্ধ করে জনাব মজহার রাস্তার সংগ্রামে নেমে আসার কথা বিবেচনা করতে পারেন, কেননা কমরেড রনোর জীবনে সংগ্রামই ছিল সব চাইতে পছন্দের এবং বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা না করার কোষ্ঠী পাথর।
সময় বড় বালাই। সময়ই অনেক প্রশ্নের সহি জবাব দিতে সক্ষম। সময়ই প্রমান করবে, কমরেড রনোর জন্য, জনাব মজহারের শোক প্রকাশ কতটা আসল আর কতটা খলের ছল। লেখকঃ সাবেক সাধারণ সম্পাদক, যশোর এম এম কলেজ ছাত্র সংসদ (১৯৮০-৮১)। সংগঠক প্রগ্রেসিভ ডেমোক্রেটিক ইনেশিয়েটিভ, কানাডা।