ফুটবল যার জীবন, ফাইনাল ম্যাচে ইনজুরির কারনে মাঠ ছাড়তে হলে চোখ থেকে তার অঝোরে পানি ঝরবেই। বেঞ্চে বসে দুই হাত চেপেও সেই কান্না থামানো কঠিন ছিলো অল টাইম গ্রেট মেসির জন্য। মাঠে থেকে সেই কান্না অনুভব করে আরেকজন হয়তো দম ধরে খেলে গেছেন নিজের জীবনের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। অতিরিক্ত সময়ে বদলী হিসেবে মাঠ ছাড়ার সময় ভেতরের জমে থাকা সেই কান্না থামিয়ে রাখতে পারেননি ডিমারিয়াও। যা সিক্ত করেছে কোটি কোটি ভক্তের চোখ, ফুটবল বোদ্ধাদেরও।
তবে তাদের সেই সময়ের কান্নায় শেষ পর্যন্ত সুখের উপলক্ষ্য এনেছে অতিরিক্ত সময়ের ১২ মিনিটে মার্টিনেজের গোল। লাউতারো কী দারুন গোল উপহার দিয়েছে ডিমারিয়া-মেসিকে। পুরো খেলায় এই মুভেই আলবিসেলেস্তোদের খেলার ছাপ দেখা গেছে। তা না হলে সারা ম্যাচেই আর্জেন্টিনার গতিহীন ও ব্যাকপাস নির্ভর খেলা খুবই বিরক্তিকর লেগেছে। এমনকি ফাইনালে মেসির খেলায়ও হতাশায় ছাপ ছিলো। ডিমারিয়ার কিছু মুভ মনোহরক হলেও শেষ ম্যাচে তার খেলায়ও আড়ষ্টতা দেখা গেছে। মিডফিল্ডে ডিপল-এনজো-ম্যাক অ্যালিস্টার প্রতিপক্ষের ডিবক্সে বল পাসের চেয়ে নিজেদের হাফে বল ঠেকানোতেই ব্যস্ত ছিলেন বেশি। ভুল পাসও হয়েছে। লেফট উইং এ ডি মারিয়াকে আনায় রাইট উইং থেকে ধারালো কোন আক্রমণই হয়নি। কারন রাইট উইংএ মন্তিয়েল বল রিসিভ ও আক্রমণ কোনটাতেই সফল ছিলেন না। মোট কথায় কোন দিকে দিয়ে আক্রমনে যাবে, বল কাকে পাস দিবে এই বুঝতে বুঝতে প্রথমার্ধ শেষ করে বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। যদিও খেলার প্রথম মিনিটে নিজেদের মধ্যে দেয়া নেয়া করে দারুন গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেছিলো মেসি বাহিনী। কিন্তু আলভারেজ বল লক্ষ্যে রাখতে পারেননি। আবার ডি মারিয়ার ক্রসে মেসির গতিময় শট বাধা পেয়েছে আলভারেজের গায়ে লেগেই।
এই ম্যাচে বেটার টিম ছিলো কলম্বিয়া।রদ্রিগেজ, ডিয়াজ ও কর্দোভার চেষ্টা ছিলো, বার ঘেষে বলও গেছে। এমি মার্টিনেজ আরো একটি দারুন সেভ করেছে। তবে সব মিলিয়ে তাদের আক্রমণের ধারও যে ভয়াবহ ছিলো তা বলা যাবে না।
অবশ্য এই ম্যাচে মাঠে, মাঠের বাইরে অনেক কিছু বিরক্তিকর ছিলো। একটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ নির্ধারিত সময়ের ১ ঘন্টা ২২ মিনিট পর শুরু হলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের স্টেডিয়ামের বাইরে যথাযথ নিরাপত্তা না থাকায় দর্শকদের অনেকে ফ্রিতে ঢোকার জন্য দেয়াল টপকালো। এতে বিশৃঙ্খলায় খেলা শুরু হতেই চলে গেলো ১ ঘন্টা ২২মিনিট। ভাবা যায়। এই ভাবনার মধ্যেই প্রথমার্ধের দশ মিনিট শেষে দ্বিতীয়ার্ধের খেলা দেখতে বসলাম। সময় শেষ, খেলা শুরু হয় না। দেখি পপস্টার শাকিরা আলোর ঝলকানির মাঝ থেকে উদয় হইলো। খেলা থামিয়ে রেখে এভাবে কেউ কনসার্ট আয়োজন করে, যতই শাকিরা নাচুক?
এতোসব ঘটনার পরও শেষ পর্যন্ত বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা পরপর তিনটি কাপ জিতে রেকর্ড গড়তে পেড়েছে। ১৬ বার কোপা জিতেও রেকর্ড গড়েছে আলবিসেলেস্তোরা। তবে এইসব রেকর্ড ফেকর্ডের তোয়াক্কা যারা করেন না সেই মেসি ও ডিমারিয়াদের শেষ বেলা এভাবে রাঙ্গিয়ে যাক, তা মনে হয় ফুটবলই চেয়েছে? আর এর দায় তো ফুটবলের আছেই।