শীত বাড়ার সাথে অ্যাজমার সমস্যাও বাড়ে। আবহাওয়ার তারতম্যের জন্য বছরের যে কোনও সময়ে অ্যাজমা রোগীদের সমস্যা বাড়লেও শীতে এর প্রকোপ অনেক বেড়ে যেতে পারে। তাই চলুন রোগটির বিভিন্ন কারণ ও এ সময়ে যেসব বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে সে সম্পর্কে জেনে নিই।
শীত বাড়ার সাথে সাথে বাড়ে অ্যাজমার সমস্যাও। আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে যদিও বছরের যে কোনও সময়ে অ্যাজমা রোগীদের সমস্যা বাড়তে পারে তবে শীতকালে এর প্রকোপ অনেক বেড়ে যায়। চলুন জেনে নিই রোগটির বিভিন্ন কারণসহ ও শীতকালে অ্যাজমা রোগীদের যেসব বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে সেসব বিষয়ে বিস্তারিত।
অ্যাজমা কি?
আমাদের ফুসফুসে রয়েছে সরু সরু অনেক নালী পথ যার মাধ্যমে আমদের দেহে ফুস্ফুস থেকে সারা শরীরে অক্সিজেন বাহিত হয়। তবে ধুলা-বালি, অ্যালার্জেন বা অন্যান্য কারণে যদি শ্বাসনালীর পেশি ফুলে যায় তাহলে অক্সিজেনবাহী এই নালীসমুহের পথগুলি সঙ্কুচিত হয়ে যায়। এর ফলে আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাব ঘটে এবং শুরু হয় নিঃশ্বাসের কষ্ট-সহ নানা শারীরিক সমস্যা যাকে আমরা অ্যাজমার সমস্যা বলে থাকি।
অ্যাজমার কারণ সমূহ :
অ্যাজমা বা হাঁপানি হচ্ছে শ্বাসনালির প্রদাহজনিত দীর্ঘমেয়াদি একটি রোগ। মুলত এটি একটি বংশগত রোগ হলেও ইদানীং সময়ে মাত্রাতিরিক্ত পরিবেশ দূষণের জন্য বেড়ে যাচ্ছে এই সমস্যাটি। এই রোগের কারণে প্রদাহের জন্য শ্বাসনালি ফুলে যায় এবং তা অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। নিম্নে রোগটির কিছু কারণ দেওয়া হলো।
অ্যাজমার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে অ্যালার্জি। বাতাসে ভেসে বেড়ানো ধুলো-বালি, ধোঁয়া, পশু-পাখির লোম, তুলোর আঁশ, রান্নাঘর বা বিছানার ধুলা কিংবা বাতাসে ভেসে বেড়ানো ফুলের রেণু ইত্যাদি শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে সমস্যাটি সৃষ্টি করে। এইসব অ্যালার্জেন ‘অ্যাজমা অ্যাটাক’-এর ঝুঁকিকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
বিভিন্ন প্রকার রাসায়ানিকের উগ্র গন্ধ বা গ্যাস অ্যাজমার সমস্যাকে অনেক বাড়িয়ে দিতে পারে।
কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেও অ্যাজমার সমস্যা হতে পারে।
ধূমপান করা এই রোগের জন্য অনেকটা ঝুঁকিপুর্ণ। ধূমপান প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ উভয়ই অ্যাজমার সমস্যাকে অনেকটা জটিল করে তুলতে পারে। বিশেষকরে সন্তানসম্ভবা কোনও মহিলা ধূমপান করলে বা ধূমপানের সংস্পর্শে আসলে তাঁর গর্ভের শিশুর অ্যাজমাতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়।
ঋতু পরিবর্তনের জন্য জ্বর, সর্দি-কাশির জটিলতা সহ অ্যাজমার প্রবণতা অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে।
পরিবারে অন্য কারও অ্যাজমা বা হাঁপানির সমস্যা থাকলে অন্যদের এই অসুখের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়।
যারা অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড ও জাঙ্ক ফুড খাওয়া, ঠান্ডা পানি বা ঠান্ডা পানীয় খাবার অভ্যাস অ্যাজমা বা হাঁপানির সমস্যা অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়।
এছাড়া অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও অবসাদ অ্যাজমার সমস্যা অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়।
শীতে অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগীদের করণীয়
অ্যাজমা রোগীদের জন্য ঠাণ্ডা আবহাওয়া, সর্দি-কাশি-ফ্লু বা ঠান্ডাজ্বর প্রচণ্ড কষ্ট আর বিপদের কারণ হতে পারে। প্রতি বছর শীতে ৮০ শতাংশ শিশু এবং ৪০ শতাংশ বড়দের হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয় ও তীব্রতা বেড়ে যায় যার প্রধান কারণের মধ্যে এই সময়ের ঠান্ডা, জ্বর বা ফ্লুর প্রকোপ, ঠান্ডা-শুষ্ক বাতাস, বেড়ে যাওয়া ধুলাবালু ও ধোঁয়ার পরিমাণ, কুয়াশা ও বদ্ধ গুমোট পরিবেশ ইত্যাদি দায়ী। তাই শীতে অ্যাজমা বা হাঁপানির রোগীদের প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা ও প্রস্তুতি।
শীতে অ্যাজমার রোগীদের যেসব সাবধানতা অবলম্বন করতে সেগুলো হলো-
যাঁদের অ্যাজমা বা হাঁপানি, অ্যালার্জি আছে, তারা ঠান্ডা উপভোগ করতে যাবেন না। ঠান্ডায় বের হলে পরিষ্কার স্কার্ফ বা টুপি ব্যবহার করুন। বাইরে বের হওয়ার আগে আপনার ইনহেলার দুই চাপ ব্যবহার করে নিতে পারেন। বেশি সময় বাইরে থাকতে হলে ইনহেলারটা সঙ্গেই রাখুন।
শিশুরা অনেক সময় মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়। মুখ দিয়ে নেওয়া শ্বাস শুষ্ক এবং শ্বাসতন্ত্র আরও সংকুচিত করে তোলে। শিশুদের বন্ধ নাক সব সময় স্যালাইন ড্রপ দিয়ে পরিষ্কার করে দিন।
সর্দি হলে নাক মুছতে রুমাল নয়, পেপার টিস্যু ব্যবহার করুন। নাক, চোখমুখে ঘন ঘন হাত লাগাবেন না। সর্দি ঝাড়ার পর নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোবেন। সর্দি-কাশি-ফ্লু-আক্রান্তদের থেকে দূরে থাকা ভালো।
অ্যাজমা রোগীরা শীতের শুরুতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতি বছর ফ্লু-ভ্যাকসিন নিতে পারেন।
বাড়িতে কুকুর, বিড়াল বা পোষা পাখি শোয়ার ঘর থেকে দূরে রাখুন। ঘরের আসবাব শুষ্ক রাখুন, ধুলা জমতে দেবেন না।
আপনার ইনহেলার, ওষুধ, নেবুলাইজার ইত্যাদি রসদ পর্যাপ্ত ও কার্যকর আছে কি না খেয়াল করুন। পরিবারের সবাইকে এগুলোর স্থান ও ব্যবহারপদ্ধতি অবহিত করুন।
বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসার পরও শ্বাসকষ্ট তীব্র হলে অবশ্যই হাসপাতালে চলে যাবেন।
অ্যাজমার সমস্যা থেকে বাঁচতে যা যা করতে হবে
, হাঁপানি হল ডায়বিটিস বা হাই ব্লাডপ্রেশারের মতো একটি অসুখ, যা সম্পূর্ণ রূপে নিরাময় করা সম্ভব নয়। কিন্তু সতর্কতা অবলম্বন করে চললে আর সঠিক চিকিৎসায় এই রোগের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যেমন-
ঘর-বাড়ি পরিষ্কার রাখুন।
বাড়িতে পোষ্য প্রাণী থাকলে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন জরুরি। নাকে-মুখে কাপড় বাঁধুন। প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
ঘরে আলো-বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা রাখুন।
বালিশ, কম্বল নিয়মিত রোদে দিন।
নিয়মিত কাচা, পরিষ্কার জামা-কাপড় পরুন, বিছানায় চাদর নিয়মিত বদলে ফেলুন।
চিকিৎসকের পরামর্শ মতো নিয়ম মেনে চলতে পারলে অ্যাজমা বা হাঁপানি দূরে সরিয়ে রেখে সুস্থ ভাবে জীবনযাপন সম্ভব। তাই ঠিকমতো ওষুধ খাওয়া সহ ডাক্তারের দেয়া পরামর্শ অনুযায়ী জীবন যাপন করুন।