সম্প্রতি ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচল নিয়ে উচ্চ আদালতের আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে রাজধানীর প্রেস ক্লাবের সমানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়ন।
রোববার সকাল ৯টা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে রিকশা-ভ্যান শ্রমিকরা ছোট ছোট মিছিল নিয়ে প্রেস ক্লাবে জড়ো হতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সবার কণ্ঠে একটাই দাবি, ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করা যাবে না, উচ্চ আদালতের আদেশ বাতিল করতে হবে।
সকাল ১০টার দিকে প্রেস ক্লাবের সামনে খোলা ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আবদুল হাকিম মাইজ ভাণ্ডারির সভাপতিত্বে সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।
নেতারা বলেন, এই পরিবহনের সঙ্গে দেশের ৬০ লাখ মানুষ জড়িত। যাদের আয়ে আরও অন্তত দুই কোটি মানুষ নির্ভরশীল। তাই সরকার চাইলেই ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করতে পারেন না। গত ১৯ তারিখে উচ্চ আদালত যে আদেশ দিয়েছে, তা কোনোভাবেই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নয়।
ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্তে শুধু ঢাকা নগরীতেই আট থেকে ১০ লাখ চালকসহ প্রায় ১২ লাখ মানুষ কর্মহীন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।
শ্রমিকরা জানান, ব্যাটারিচালিত রিকশা শ্রমিকরা সরকারকে রাজস্ব দিতে চায়। একটি বিধিমালার মাধ্যমে তাদের লাইসেন্স প্রদান করা হলে, এখান থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে সরকার।
আধুনিয়কায়নের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিয়ে দেশের সড়ক উপযোগী নকশায় রিকশার মডেল, এমআইএসটি উদ্ভাবিত গতি নিয়ন্ত্রক, উন্নত ব্রেকসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহনের বিআরটিএ কর্তৃক লাইসেন্সের দাবি জানান তারা।
তারা আরও জানান, একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান রাস্তায় চলতে দেওয়া হোক। আধুনিকায়নের পূর্ব পর্যন্ত মহাসড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কের বাইরে অন্যান্য রাস্তায় আঞ্চলিকভাবে চলাচলের জন্য যৌক্তিক রুট পারমিট ও নীতিমালা ঘোষণা করতে হবে।
সোমবারের মধ্যে উচ্চ আদালতের আদেশ বাতিল করা না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের উপদেষ্টা আব্দুলাহ ক্বাফি রতন।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ব্যাটারিচালিত রিকশা শ্রমিকদের পেটে লাথি মারা যাবে না। রিকশা বন্ধ না করে এর আধুনিকায়ন করলে শ্রমিকের পাশাপাশি সরকারও লাভবান হবে। ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স ও সঠিক নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব।”
রিকশা শ্রমিকদের রুটি-রুজি বন্ধ করে বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণ করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
তিনি বলেছেন, “শ্রমিকদের খেপায়েন না, তাহলে পালানোর রাস্তা খুঁজে পাবেন না। তারা তো বেশি কিছু চায়নি, শুধু চেয়েছে ব্যাটারিচালিত যানবাহন চালানোর অধিকার। তাহলে সরকারের সমস্যা কোথায়?”
জুলাই বিপ্লবের কথা স্মরণ করে ডাকসুর সাবেক ভিপি সেলিম বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রদের পাশাপাশি শ্রমিকরাও রাজপথে ছিলেন। তারাও রাজপথে রক্ত দিয়েছেন। তাহলে তাদের প্রতি এখন কেন অবিচার করা হচ্ছে?
তাই একটি সঠিক নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে দ্রুত রিকশা চালকদের ন্যায্য দাবি মেনে নিতে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে কর্মসূচি চলাকালীন অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, ব্যাটারিচালিত যানবাহন বন্ধে উচ্চ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ ছাড়া ডিএমপি কমিশনারের পক্ষে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (রমনা জোন) জানান, ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচল নিয়ে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আগামীকাল সোমবার সকাল ১১টায় ডিএমপি কার্যালয়ে আলোচনায় আহ্বান করা হয়েছে। পরে ডিএমপির আশ্বাসে শ্রমিক নেতারা আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত করেন।
রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম নাদিমের পরিচালনায় সমাবেশে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ও রাকসুর সাবেক ভিপি রাগিব আহসান মুন্না, জলি তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুছ, সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন নন্দী এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুমন মৃধা বক্তব্য দেন।
সমাবেশ শেষে প্রেস ক্লাব থেকে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিকের একটি বিক্ষোভ মিছিল হাইকোর্ট-দোয়েল চত্বর হয়ে শহীদ মিনারে যায়।
সেখানে নেতারা দুই মাসের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স, যৌক্তিক রুট পারমিট ও নীতিমালা প্রণয়ন না করা হলে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রমিক মহাসমাবেশ করে সারা দেশে আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দেন।