মিরপুরে আজ গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলনে পুলিশ আর্মি এবং গার্মেন্টস শ্রমিকদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। কয়েকজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আন্দোলনকারী গার্মেন্টস শ্রমিকরা পুলিশ এবং আর্মির দুটো গাড়িতে আগুন দিয়েছে।
পুলিশ আর্মির গাড়িতে আগুন দেয়া নিয়ে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত উচ্চবিত্ত মানুষেরা শ্রমিকদের ক্রিমিনাইজড করা শুরু করবে আজকে বিকাল থেকেই। দুঃষ্কৃতিকারী, দেশের শত্রু হিসাবে আখ্যা দিবে। শ্রমিকদেরকে আন্দোলনকে আওয়ামী লীগের কাজ হিসাবে দেশের মানুষের সামনে হাজির করবে। শ্রমিকদের দমন নিপীড়নের পক্ষে সম্মতি উৎপাদন করবে। কিন্তু তাদের আলাপে কখনোই আসবে না অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দুই দুইজন শ্রমিককে কেনো পুলিশ-আর্মি গুলিকরেহত্যার বিষয়। তাদের আলাপে আসবে না কেনো অনেক কারখানায় ২/৩ মাসের বেতন বকেয়া, কেনো এই বেতন দেয়া হচ্ছে না, কেনো বকেয়া বেতন রেখে কারখানা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে? শ্রমিক বিষয়ে কেনো অন্তর্বতীকালীন সরকারের ১৮ দফা অধিকাংশ কারখানা মালিকপক্ষ মানছে না? এইসব কিচ্ছু আসবে না, শুধু আহাজারি করা হবে এই বলে যে এই শালার শ্রমিকেরা (পড়ুন টোকাইরা) আর্মির গাড়িতে আগুন দিলো!
শ্রমিক অসন্তোষ, আন্দোলন দমনে যদি আপনারা অস্ত্র আর গুলি নিক্ষেপকেই যদি সমাধান হিসাবে ভাবেন তাইলে আপনারা মহাভূল করবেন৷ শ্রমিকরা তখন সহিংস হবেই। আজকের মিরপুরের আন্দোলন শুরু হয়েছে শ্রমিক ছাটাই এবং কারখানা বন্ধ করার জন্যই। এই শ্রমিকরাই কয়েকদিন আগে প্রত্যক্ষ করেছে আর্মির গুলিতে আন্দোলনরত দুইজন শ্রমিকের মৃত্যু। এই মৃত্যু তাদেরকে তাড়িয়ে বেড়াবেই, এই মৃত্যুগুলো তাদেরকে সংহিস করে তুলবেই।
অধিকাংশ কারখানার মালিকপক্ষ ছিলো আওয়ামী লীগ পন্থী। মালিকপক্ষের বাঁধা উপেক্ষা করেই এই শ্রমিকেরা জুলাই মাস জুড়ে ছাত্রহত্যার প্রতিবাদে জনগণের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণে গণঅভ্যুত্থানে জীবন বাজে রেখে রাজপথে হাসিনাশাহির পুলিশ র্যাব বিজিবির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। অকাতরে জীবন দিয়েছে লড়াইয়ের ময়দানে। কিন্তু অভ্যুত্থান পরবর্তীতে দেখা গেলো এই শ্রমিকের বুকে আবারো গুলি ছুড়া হচ্ছে, মৃত্যু হচ্ছে শ্রমিকদের গুলিতে। এসব ঘটনায় এটা স্পষ্ট শ্রমিকদের জুলাই মাস এখনো শেষ হয়নি। ফলে, তাদেরকে আওয়ামী লীগ বইলা, ষড়যন্ত্রকারী বইলা শ্রমিক বিষয়ে পূর্বের ফ্যাসিস্ট সরকারের মতো দমনের পজিশন নিলে ভুল করবেন। ষড়যন্ত্র শ্রমিকেরা করে নাই, তারা যা চায় তা প্রকাশ্য ব্যাপার।
আপনারা বলছেন দায় ও দরদের রাজনীতির কথা। দায় ও দরদের রাজনীতিতে দেশের প্রায় ৫০ লাখেরও বেশি পোশাক শ্রমিকদের অপাঙক্তেয় করে রাখলে এই এই দায় ও দরদ কোথায় তৈরি হবে না। আমরা দেখতে পাচ্ছি দরদ দেখানো হচ্ছে পতিত হাসিনার খুব কাছের ব্যবসায়ীদের প্রতি। আমরা দেখি হাসিনার আমলের বিজিএমইএর সভাপতি, হাসিনার আমলের এমপি এ কে আজাদের মতো মানুষকে রাজনৈতিকভাবে এই সরকার পুনর্বাসন করছে। তার মতো ব্যক্তিদের সাথে মিটিং করে শ্রম এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শ্রমিক আন্দোলনের গুলিবর্ষণের দিকে এগিয়েছে। ফলে শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে ষড়যন্ত্র এই সরকার পতিত আওয়ামীলীগের সাথে মিলিয়েই করেছে।
আগেই বলছি শ্রমিক আন্দোলনে রাষ্ট্রের রাইফেল কার্যকর নয়। এটা ভুল, মহাভুল। এই সরকার নাকি অনেক জানা, অনেক বুঝা, অনেক পড়াশোনা করা মানুষ নিয়ে সাজানো। ফলে আপনাদের প্রতি আহবান থাকবে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন ভালো করে পাঠ করেন, খুঁজে দেখুন পুরোনো সময়কে।
আমরা চাই শ্রমিকদের জুলাই অভ্যুত্থান সমাপ্ত হোক। তাদের উপর সরকারের চালানো বন্ধ হোক। আমরা চাই শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি দেয়া হোক, কারখানা বন্ধ হওয়া থামুক। আমরা চাই শ্রমিকদের বেঁচে থাকার জন্য সম্মানজনক মজুরি। আমরা চাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকার শ্রমিকদের আকাঙ্খা বাস্তবায়ন করুক। সুতরাং দ্রুতই বিজিএমইএর ভূত ঘাড় থেকে সরান, দ্রুতই এ কে আজাদদের মতো দালালদের প্রভাব থেকে সরকারকে সরান। মালিকপক্ষকে শক্ত করে চাপ দেন, বকেয়া বেতন পরিশোধের ব্যবস্থা করেন, ১৮ দফার বাস্তবায়ন করেন। আর শ্রমিকদের আস্থাঅর্জনে শ্রমিক অঞ্চলগুলোয় গিয়ে শ্রমিকদের সাথে আলাপে বসেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে না। কিন্তু ভুলেও শ্রমিকদের ন্যায্য রুটি-রুজির সংগ্রামে রাষ্ট্রের রাইফেলকে মুখোমুখি দাঁড় করাবেন না, এটা এনাফ করেছেন।